জসীম উদ্দীন:: হঠাৎ করে প্রতিবেশি দেশ ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রভাবে দেশের বাজারে পেঁয়াজ-এর দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। পেঁয়াজের লাগামহীন দাম বাড়াতে বিব্রত সরকার, অসন্তোষ সাধারণ মানুষ ও ক্রেতারা। এরই প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াছ আসছে বাংলাদেশে। পার মেট্রিকটন ৫০০ ডলার কেজি ৩৫ টাকা দামে এ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। এরপরও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অসাধু ব্যবসায়ী ও সেন্ডিকেটকে দোষছেন সংশ্লিষ্টরা।
এমতাবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বুধবার বিকেল ৫টার দিকে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব তৌফিকুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পেঁয়াজ আমদানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এদিকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমার থেকে আসা ৫৮৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ খালাস করা হয়। এসব পেঁয়াজ ট্রাক ভর্তি করে ইতিমধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রওনা দিয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাবে খালাসের অপেক্ষায় নাফনদে ভাসছে ২১ হাজার ৭৫ বস্তার (৮৪২ মেট্রিক টন) কয়েকটি পেঁয়াজের ট্রলার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফ স্থলবন্দর কেন্দ্রিক কোন মজুদদার নেই। বন্দর থেকে খালাসের পর পরই ছাড়পত্র নিয়ে ট্রাক ভর্তি করে এসব পেঁয়াজ চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। তবে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধকে পূঁজি করে টেকনাফের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি সেন্ডিকেট। বিশেষ করে ঢাকার শ্যামবাজার কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের দখলে রয়েছে বর্তমান টেকনাফের স্থলবন্দর।
খোদ টেকনাফের ব্যবসায়ীদেরকেও পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের সিন্ডিকেট থেকে। ফলে সারাদেশের ন্যায় টেকনাফসহ কক্সবাজার জেলায় পেঁয়াজের বাজারে একই চিত্র। আর এ সেন্ডিকেটের কারণেই নাকি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের বাজার।
তবে মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব তৌফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের চাহিদা ও পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে টেকনাফে আসা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে কারসাজি করলে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বাজারদাম সহনশীল করতে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি নির্বিঘ্নে করা হবে। পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সুলভমূল্যে পেঁয়াজ সরবরাহ করতে হবে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন কক্সবাজারে ৬৫-৭০ টাকায় পেঁয়াজের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা মো. আবছার উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আসছে এরপর পেঁয়াজের এত দাম থাকার কথা নয়। কয়েকদিন পর পর ৫০০ থেকে ৭০০ মেট্রিকটন করে গত কয়েক সপ্তাহ’র মধ্যে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ খালাস হয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর। যা দ্রুত সরবরাহ করে দেয়া হয়েছে দেশে বিভিন্ন স্থানে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
প্রতিনিধি