অনলাইন সংস্করণ: ত্রীর সঙ্গে বিবাদ ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। এ থেকে বিরোধ দেখা দেয় শ্যালক-শ্যালিকার সঙ্গেও। রাগ করে একমাত্র প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী চলে যান তার বোনের বাড়ি। পরদিন সকালে স্ত্রী কর্মস্থলে গেলে শ্যালিকার বাসায় গিয়ে তাকে ও তার দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেন। এ সময় সন্দেহ দূর করতে নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকেও কুপিয়ে জখম করে রেখে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তার অবস্থাও আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। এরই মধ্যে ঘাতক আব্বাসকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। গতকাল বিকালেই আব্বাসকে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। আব্বাস পেশায় খানসামা (ওয়েটার)।নাসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিআই খোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছয় তলা বাড়ির ষষ্ঠতলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাট থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রক্তাক্ত আহত অবস্থায় নিহত নাজনীনের বড় বোনের একমাত্র প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়া আক্তারকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একটি ছোরা উদ্ধার করেছে।
নিহতরা হলেন- নাজনীন আক্তার (২৮), তার মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজা (২)। নাজনীন সিআইখোলা এলাকার বাসিন্দা আবদুস সোবহান সুমন মিয়ার স্ত্রী। সুমন সানারপাড় জোনাকি পেট্রলপাম্পে চাকরি করেন।সারারাত পেট্রলপাম্পে নাইট ডিউটি করে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বাসায় ফেরেন সুমন মিয়া। ভেতরে প্রবেশ করেই দেখেন ফ্লোরে স্ত্রী ও দুই মেয়ের রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। পাশেই আহতাবস্থায় বসে কাতরাচ্ছিল আব্বাসের একমাত্র প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৫)। এ দৃশ্য দেখে সুমন চিৎকার করে ওঠেন। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে বীভৎস এ ঘটনা দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন, কেয়ারটেকার কবীর হোসেন এবং নিহত নাজনীনের বড় বোন ইয়াছমিন আক্তারকে আটক করেছে। তবে ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে নিহত নাজনীনের বড় বোন ইয়াছমিনের স্বামী আব্বাসকে।সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক বলেন, পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে হত্যাকা- সংঘটিত হয়।
কারণ সকাল সাড়ে ৭টার আগে ওই বাসায় নিহত নাজনীনের বড় বোন ইয়াছমিন ছিলেন। পুলিশ ঘটনার জন্য দায়ী আব্বাসকে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করেছে। ৩ জনকে হত্যা এবং নিজের সন্তানকে কুপিয়ে আহত করে সে ঘটনা আড়াল করতে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার স্টেশনের ভেতরে একটি বিয়েবাড়িতে খানসামার কাজ করছিল। যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদ গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে এই পরিবারেরই কেউ এ হত্যাকা-টি ঘটিয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি নিহত নাজনীনের বড় বোনের স্বামী আব্বাস একাই এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। আব্বাসের প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়া ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। ঢাকা মেডিক্যাল চিকিৎসাধীন সুমাইয়াই বিষয়টি পুলিশকে নিশ্চিত করেছে।
এদিকে গতকাল সকালে ঘটনাস্থল সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আনোয়ার হোসেনের বাড়ি ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। ওই বাড়ির আশপাশের বাড়ির ছাদেও অনেক নারী-পুরুষ।
খবর পেয়ে সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা দুপুরে আলামত সংগ্রহ করার পর লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ দেড়শ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।নিহত নাজনীনের স্বামী সুমন বলেন, আহত সুমাইয়াকে ঘটনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, তার বাবাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বাবা তাকেও মারার জন্য ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
সুমাইয়ার বরাত দিয়ে সুমন আরও জানান, গতকাল সকাল ৮টার দিকে আব্বাস তার ফ্ল্যাটে আসে। ওই সময় বড় বোন ইয়াছমিনকে মারধর করা নিয়ে আব্বাসের সঙ্গে নাজনীনের বাদানুবাদ হয়।
এদিকে নিহতের বড় বোন ইয়াছমিন বলেন, তিনি একটি গার্মেন্টে কাজ করেন। স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের কারণে তিনি বুধবার রাতে মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে ছোট বোন নাজনীনের বাড়িতে চলে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি কাজে চলে যান। পরে গার্মেন্টে কর্মরত অবস্থায়ই জানতে পারেন ছোট বোন নাজনীন খুন হয়েছেন। এ খবর পেয়ে তিনি নাজনীনের বাড়িতে ছুটে আসেন। তিনি আরও বলেন, তিনি নাজনীনের পাশের মহল্লা বাতানপাড়া এলাকায় স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকেন। তার স্বামী মাদকাসক্ত। এ কারণে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো।
সুমন বলেন, তার বড় ভায়রা আব্বাসের সঙ্গে জেঠাস ইয়াছমিনের পারিবারিক কলহ চলছিল। গত মঙ্গলবারও দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। ওই সময় আব্বাস তার জেঠাস ইয়াছমিনকে মারধর করেন। এ খবর পেয়ে শ্যালক হাসান আব্বাসের বাসায় গিয়ে তাকে মারধর করেন। পারিবারিক কলহের কারণে বুধবার রাতে মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে ইয়াছমিন আমাদের বাসায় চলে আসে। বড় বোন ইয়াছমিনকে মারধরের কারণে একবার নাজনীনও দুলাভাই আব্বাসকে চড় দিয়েছিল বলে জানান সুমন।
প্রতিনিধি