ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তুমুল বিক্ষোভের শঙ্কায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক পাহারা আর মোড়ে মোড়ে কাঁটাতারের ঘেরাটোপে ঈদের দিনও শ্রীনগরের রাস্তাগুলো ছিল মরুভূমির মতোই নিষ্প্রাণ।
আগের ঈদগুলোর আনন্দ, কোলাহলের বিপরীত চিত্র এখন কাশ্মীরিদের চোখে-মুখে; উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ।
সপ্তাহখানেক আগে নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেওয়া বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করে একে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্তের পর অবরুদ্ধ উপত্যকায় এবারের ঈদ হাজির হয়েছে এমন বিষণ্ন রূপেই।
বড় জমায়েতের ভয়ে সোমবার শ্রীনগরের বেশিরভাগ মসজিদেই ঈদের জামাত আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
শুক্র ও শনিবার শহরটির অনেক এলাকা থেকে বেশকিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও সহিংসতার শঙ্কায় ঈদের আগের দিন রোববার সেগুলো পুনর্বহাল করা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় সরকারের সরবরাহ করা বিভিন্ন ছবিতে শ্রীনগরের আশপাশের ছোট মসজিদগুলোতেই স্থানীয়দের ঈদের নামাজ পড়তে দেখা গেছে।
আটক সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকেও কাছাকাছি মসজিদে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ঈদে কাশ্মীরি জনগণকে ‘ঘরের মধ্যে আটকে’ রাখার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ইয়েচুরি ও সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা শুক্রবার কাশ্মীরে নেমে সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামির সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়নি।
নিরাপত্তা বাহিনী গত সপ্তাহে কাশ্মীরের যে তিন শতাধিক রাজনীতিককে আটক করেছিল, তারিগামি তাদের একজন।
“আমাদের চিন্তা কাশ্মীরি জনগণের সঙ্গে, যারা নিজেদের ঘরেই আটক অবস্থায় আছেন। এখনও আমরা জানি না আমাদের কমরেডরা সেখানে কেমন আছেন, কোথায় আছেন। ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি আর দর্শনের বৈচিত্র নিয়েই আমাদের দেশ। এটাই আমাদের শক্তি। যে অগণতান্ত্রিক উপায়ে জোর করে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা বদলানো হলো, তা বিশেষ মর্যাদার অন্যান্য রাজ্যকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, এ বিশেষ রাজ্যগুলোর বেশিরভাগেরই অবস্থান আমাদের সীমান্তে,” টুইটারে বলেছেন সীতারাম ইয়েচুরি।
রোববার নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের আগে শ্রীনগরের বিভিন্ন দোকান-বাজারে মানুষের ছিল উপচে পড়া ভিড়; বিকালের দিকে পুলিশ দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ দিলে সন্ত্রস্ত মানুষ দ্রুত ঘরমুখে রওনা দেয়।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, উপত্যকাটির জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভ্যানে করে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার, হাঁস-মুরগির মাংস, ডিম ও সবজি বাড়ি বাড়ি সরবরাহের চেষ্টাও চলছে বলে জানিয়েছে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া।
গুজবে কান না দিতে সরকার বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে।
এদিকে আটক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।
লোকসভার সাংসদ আকবর লোন ও হাসান মাসুদি এ আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
সূত্র: বিডিনিউজ২৪
বার্তা বিভাগ প্রধান