Home » কাশ্মিরিদের ‘অবরুদ্ধ ঈদ’

কাশ্মিরিদের ‘অবরুদ্ধ ঈদ’

সারাবিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম যখন ঈদুল আজহা উদযাপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের মুসলিমদের দৃশ্য একদমই আলাদা। সেখানে যেন ঈদ নয়, ভর করেছে শোকের ছায়া। কাশ্মিরিদের সঙ্গে কথা বলে বিশেষ এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

গত সোমবার (৫ আগস্ট) ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি বিলও অনুমোদন করেছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানকার শতাধিক স্থানীয় নেতাকে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহও।

সোমবার থেকে টানা পাঁচদিন অবরুদ্ধ থাকার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বাসিন্দারা শনিবার বিকেলে কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। মূলত ঈদের কেনাকাটা করার জন্য শনিবার কারফিউ কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। শ্রীনগরে শাটারও উঠেছিল কিছু কিছু দোকানপাটের। বেশ কিছু মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, শুধু ঈদের উপহারই নয় – নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেও। কোরবানির পশু বেচতে শ্রীনগরের একটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক কাশ্মিরি যুবক বলেন, ‘এটি কোনো ঈদ নয়, এটি এবার শোক। গত দুই দিন আমরা তেমন কিছু করিনি। ঈদের পর আমরা ৩৭০ ফিরিয়ে আনবো। এটা কাশ্মির। এটা আমাদের ভূমি।’ 

ওই যুবক বলেন, ‘যখনই মুসলমানদের কোনো উৎসব আসে, তখনই কোনো না কোনো গণ্ডগোল তৈরি হয়। ভারতকে বুঝতে হবে, এটা আমাদের জন্য একটি বড় দিন …এটি আত্মত্যাগের দিন, সুতরাং আত্মত্যাগ করবো। দুদিন পর দেখবেন, এখানে কী হয়।’

ঈদের আগে কাশ্মীরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে গ্রামের বহু খামারি এবার শহরে গিয়ে কোরবানির পশু বিক্রি করতে পারছেন না। তারা বিরাট সঙ্কটে পড়েছেন। শ্রীনগরের রাস্তায় একজন খামারি বললেন, ‘এবার কোনো ব্যবসা নেই। আমার মনে হয়না এবার কোনো পশু বিক্রি করতে পারবো। সকাল থেকে না খেয়ে আছি।’

শনিবার কারফিউ শিথিল করার পর কিছু ফেরিওয়ালা ঠেলাগাড়িতে ফল, সবজি সাজিয়ে ফেরি করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাদের ছবি তোলার সময় একজন কাশ্মিরি যুবক পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলেন, “বাইরের বিশ্বকে কী দেখাতে চান আপনারা – শ্রীনগর প্রায় স্বাভাবিক? কাশ্মিরিরা ফল-সবজি কিনছে?”

সৈন্যদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যেও শনিবার কিছু কিছু জায়গায় বেশ মানুষ জড় হয়। অনেক গাড়ি বের হয়।   দিল্লিতে বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতি ঘোষ বলছেন, ঈদের কথা মাথায় শনিবার কারফিউ কিছু শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু গত দুদিনে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিক্ষোভের খবরাখবর, ফুটেজ, ছবি প্রচার হওয়ার ফলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আবারো তাদের অবস্থান শক্ত করছে।

৯ আগস্ট (শুক্রবার) জুমার নামাজের আগে ঈদুল আজহা উপলক্ষে জম্মু-কাশ্মিরে জারিকৃত কারফিউ শিথিল করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরুদ্ধে ওইদিন কাশ্মিরজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। টিয়ার গ্যাস ও ছররা গুলি ছুড়ে সেই বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করে ভারত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম হাসপাতালসূত্রে অর্ধশত মানুষের আহত হওয়ার খবর দেয়। শনিবার রাজ্য পুলিশ দাবি করে, সেখানকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও কোনও গুলি ছোড়া হয়নি।

শনিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরগুলোকে ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বর্ণনা করে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্য সচিব ও পুলিশ মহাপরিচালকের তরফে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়, “গত ছদিনে (অর্থাৎ পার্লামেন্টে ৩৭০ ধারা বিলোপের ঘোষণার পর থেকে) কাশ্মিরে পুলিশ কিন্তু একটাও বুলেট ছোঁড়েনি।”

তবে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় কারফিউ-র কড়াকড়ি আবার নতুন করে বহাল করা হবে।

রবিবার মধ্যরাতের পর থেকেই নতুন করে আবার কারফিউ আরোপ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, পুলিশের গাড়ি শ্রীনগরের রাস্তায় রাস্তায় রবিবার সকাল থেকেই মাইকিং করে বেড়াচ্ছে – কোনও ধরনের জমায়েত যে নিষিদ্ধ সে কথা মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, দোকানপাটের শাটার ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

ফলে সোমবার ঈদের আগে কাশ্মিরের পরিস্থিতি আবার ভীষণ রকম থমথমে হয়ে উঠেছে।

 ঈদে শুধু কারফিউ শিথিল করাই নয় – গত এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ মোবাইল, ল্যান্ডলাইন বা ইন্টারনেট পরিষেবাও হয়তো আবার চালু করা হবে বলে ধারণা ছিলো । কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ এখন সেটুকুও আর আশা করছেন না। কাশ্মিরিদের কাছে টাকা-পয়সাও নেই। শ্রীনগরে এখন চালু আছে শুধু জে অ্যান্ড কে (জম্মু ও কাশ্মির) ব্যাঙ্কের এটিএম-গুলো। অন্য কোনও সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম কাজ করছে না, বা করলেও তাতে টাকা নেই।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *