মা গো আমি ভালোই আছি এখন। তবে রাত্রি হলে আর ছুটির দিনে বড় ভয় ভয় করে।রাগ যে ওর বড়ই বেশী।সামান্য কথাতেই রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে, আবার কখনও রেগে গিয়ে আমার গায়ে হাতও তোলে, আমি চুপ করে থাকি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে। তবে তেমন চিন্তার কিছু নেই কারণ ছুটির দিন ছাড়া তেমন সময় তো আর নেই।চিন্তা করো না আমি ভালো থাকব। ইতি তোমার আদরের অনুরাধা।
মা গো তোমরা সবাই তো আমায় সবসময় বলতে আমি খুব সুন্দরী। কিন্তু তোমার জামাই তো আমায় ফিরেও দেখে না, কষ্টে আমার বুক ফেটে যায়, আমি খুব বুঝতে পারি অন্য কারোর সাথে ও খুব খুশীতে আছে।তবে তুমি চিন্তা করো না আমার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সবসময় মানিয়েই চলব, আমি ভালো থাকব।
ইতি তোমার আদরের অনুরাধা।
মা গো তোমরা সবাই তো বলতে আমি কত গুনী, আমার হাতের রান্না কত সুন্দর অথচ ও তো আমার হাতের রান্না একদম পছন্দ করে না শুধু বলে যে রান্না তো রান্নার লোক দিয়েও করানো যায় একটু তো বাইরে নিয়ে যাওয়ার মত শ্রী থাকা চায়। আমি শ্রীহীন শুনতে শুনতে ক্লান্ত কিন্তু আমি চুপ করে সহ্য করে যাই আমার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে। ইতি তোমার আদরের অনুরাধা।
মা গো কত যৌ’তুক তো দিয়েছ বিয়ের সময় যদি সাথে একটা বডিগার্ডও পাঠাতে যৌ’তুক হিসাবে তাহলে হয়ত যখন তখন আমাকে মারধর করতে পারত না।সমাজের কাছে হয়ত খুব হাস্যকর লাগছে এটা শুনে কিন্তু সারাদিনের কষ্ট তো আমার, গভীর রাতের কষ্ট তো আমার। আমি স্বাবলম্বী অর্থনৈতিকভাবে কিন্তু শা’রীরিকভাবে অবশ্যই দুর্বল। ও যদি হঠাৎ করে আমায় কিছু করে মানে যদি শেষ করে দেয় তাহলে আমার ছেলের কি হবে?এই ভেবে ভেবে আমি অস্থির কারণ কত অ’ত্যাচারের পরেও আর অর্থনৈতিক স্বনির্ভর হওয়া সত্বেও ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি মৃতবৎ সম্পর্ককে টিকিয়ে রেখেছি। ইতি তোমার আদরের অনুরাধা।
মা গো আমি যাচ্ছি। তুমি আমার জন্য আর চিন্তা করো না কারণ তুমি জানো তো প্রতিদিন কত অনুরাধা চলে যাচ্ছে, প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে কত অনুরাধার জন্ম হচ্ছে মৃ’ত সম্পর্কে প্রাণ সঞ্চারের আশা নিয়ে আর তারপর তারাও চলে যাচ্ছে। আবার নতুন অনুরাধার জন্ম হচ্ছে। মা গো, সমাজকে বলো না অনুরাধাদের জন্য সত্যি করে কোন নতুন প্রথা করতে- যেখানে স্বজনেরা থাকবে,সুজন থাকবে, সবুজ দুটি হৃদয় থাকবে, সন্তানসন্ততি থাকবে, সংসার থাকবে, সমঝোতা থাকবে, সততা থাকবে, সত্যতা থাকবে আর শান্তি থাকবে।
তবে জান তো অ’ত্যাচারীদের শুধু নিয়মমাফিক শাস্তি দিয়ে নয়, সমাজের মা’নসিকতার সার্বিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চেষ্টা করতে হবে যাতে করে আর কোনো নতুন অনুরাধাকে জন্ম নিতে না হয়। সমাজকে সজাগ হতে, সত্যি করে ভালোবাসার হাত বাড়াতে হবে যাতে করে সময় থাকতেই অ’ত্যাচারীর হাত ভেঙে দিতে পারা যায়, অনুরাধারা অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা সত্বেও যেন ‘সবাই কি ভাববে’ এই ভয়ে যেন চুপ করে চেপে না থাকে। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, শরীরের সুন্দরতা, মনের উদারতা, কর্মনিপুনতা,আধুনিকতা কোনটাই অনুরাধার রক্ষাকবচ হতে পারবে না যতক্ষণ না সমাজের পরিবর্তন হবে।
সমাজ কোন আলাদা প্রানী নয়, আমি তুমি সবাই মিলে এই সমাজ তাই একবার সবাই নিজেকে প্রশ্ন করে দেখতে পারে না কি যে সবাই ঠিক কতটা দায়িত্ব পালন করছে একটা নিরাপদ সমাজ তৈরির জন্য? ইতি তোমার আদরের অনুরাধা ।
সূত্র: রিয়েল সিলেট
বার্তা বিভাগ প্রধান