ভারতের জম্মু-কাশ্মীরকে দেওয়া ‘বিশেষ মর্যাদা’ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকের পর সংসদে এ ঘোষণা দেন তিনি। দেশটির সংবিধানের ৩৭০ ধারার ফলে জম্মু-কাশ্মীরে চালু ছিল এই ‘বিশেষ মর্যাদা’। এরই মধ্যে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তিতে সই করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠিত হবে। রাজ্যটি দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হবে। একটি জম্মু ও কাশ্মীরে, অন্যটি লাদাখে।কাশ্মীরে বিপুল পরিমাণ আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করার পর এবং রাজ্যের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করে রাখার পর এ পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় সরকার।
এর আগে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইটে বলেন, ‘আমি জানি, আমাকে মধ্যরাত থেকে নজরবন্দি রাখা হয়েছে এবং এরই মধ্যে অন্য মুখ্য নেতাদের ক্ষেত্রেও এ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হচ্ছে। সত্যি কি না জানার উপায় নেই। কিন্তু যদি সত্যি হয়, আমি আপনাদের সবাইকে দেখাব, অন্যদিকে কী রয়েছে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।’
এদিকে তিন দিন থেকে কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় কাশ্মীরে অবস্থান করা দেশি-বিদেশি পর্যটক থেকে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান অমরনাথ যাত্রীদের প্রত্যেককেই কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অন্তত ২০ জন পাকিস্তানি জঙ্গির দল ভারতীয় সেনার ওপরে বড় ধরনের একটি হামলার ছক কষছিল। এর মধ্যে গত শনিবার পাকিস্তানের বর্ডার অ্যাকশন টিমের (বিএটি) পাঁচ সদস্য ভারতে ঢুকে পড়ে কেরান সেক্টরের একটি ফরোয়ার্ড পোস্টে হামলার চেষ্টা চালায়। অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্তরেখা পেরিয়ে একটি ভারতীয় ঘাঁটির খুব কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু হামলা চালানোর আগেই ভারতীয় সেনারা গুলি করে তাদের হত্যা করে।
এদিকে উত্তেজনার মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের বহু এলাকার মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন ফোনের পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট ও কেবল টিভি পরিষেবাও। রাজ্যের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে একসঙ্গে অনেক মানুষের জমায়েত ও জনসভা নিষিদ্ধ করা হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই রাজ্যে অতিরিক্ত আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। শুক্রবারই অমরনাথ তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়।
এসব উত্তেজনার মধ্যে গতকাল রোববার গভীর রাতে জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। এ ছাড়া গৃহবন্দি করে রাখা হয় রাজ্যের শীর্ষ নেতা সাজাদ লোনসহ একাধিক নেতাকে।
এ ঘটনার পরই রাজনৈতিক মহলের ধারণা করছিল, এসব ঘটনার পর রাজ্যের ‘বিশেষ মর্যাদা’ বদলানোর চেষ্টা হতে পারে। এই ইস্যুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ, এর সঙ্গে রাজ্যের বাসিন্দাদের অধিকারের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে।
সুত্র: এনটিভি
প্রতিনিধি