Home » ডেঙ্গুতে আক্রান্তে ছেলের মৃত বাবার কাঁধে লাশ, মেয়ে হাসপাতালে

ডেঙ্গুতে আক্রান্তে ছেলের মৃত বাবার কাঁধে লাশ, মেয়ে হাসপাতালে

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ছেলে রাইয়ান সরকারের (১১) লাশ যখন আমার কাঁধে তখন মেয়ে মালিহা সরকার (৬) মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে হাসপাতালে। এই পরিবেশ সহ্য করা কঠিন। আমি ভাবতেই পারিনি, এমনটা ঘটবে আমার সঙ্গে। আজ শনিবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মেয়ের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই বলছিলেন বাবা মমিন সরকার।

মমিন সরকার বলেন, ‘মেয়ে মালিহা সরকার ১ আগস্ট থেকে ভর্তি আছে স্কয়ার হাসপাতালের ১১২৩ নম্বর বেডে। ঠিক এই বেডেই ৩১ জুলাই ভর্তি করেছিলাম আমার বড় ছেলে রাইয়ানকে। ছেলের শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ঠিক তখনই মেয়েকে এই বেডে ভর্তি করি।মমিন সরকার বলেন, ‘ছেলে মারা গেছে গতকাল শুক্রবার দুপুরে। ছেলেকে নিয়ে যখন হাসপাতাল ছাড়ি তখন আমার মেয়ের প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। ছেলের লাশ যখন আমার কাঁধে তখন মেয়ের অবস্থা ভালো না। এর চেয়ে অসহায় সময় জীবন আর কখনো কাটেনি।রাইয়ানের বাবা আরো বলেন, ‘ছেলে যে আমার সত্যিই চলে যাবে এটা আমার বিশ্বাসই হয়নি। ডাক্তাররা যখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন তখনও আমার মনে হচ্ছিল ছেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। স্কয়ার হাসপাতালের ১১২৩ নম্বর বেডে গিয়ে দেখা যায়, বাবা মমিন, মা জান্নাত আরা রোমানা, চাচা মনিরুল ইসলাম ও মনিরুলের স্ত্রী কাঁদছেন। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছেন না।

একটু পরেই মা রোমানা বিলাপ করতে করতে বলতে থাকেন, ‘আমার মেয়ে মালিহার আগে জ্বর এসেছিল। ওরা যা যা করবে দুজন এক সঙ্গেই করবে। তাই ছেলে আমার বারবার বলছিল, ‘‘আমারও জ্বর আসুক, তাহলে মালিহার পাশে শুয়ে ওর সাথে কথা বলতে পারব।রোমানা আরো বলেন, ‘ঘরের ভেতরে ছেলে ফুটবল খেলছিল। কী জোরে জোরে বল পেটাচ্ছিল। ওইটাই মনে হয় ওর শেষ খেলা ছিল। রাতে ঘুমের ঘরে আমার ছেলে বলছিল সব ভেঙে চুরে আসতেছে। আসিস না, তুই আসিস না।বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন রোমানা।একটু স্বাভাবিক হয়ে জান্নাত আরা রোমানা বলেন, ‘সব খবরে দেখলাম আমার ছেলে নাকি জন্মদিনে মারা গেছে। এটা মিথ্যা। আমার ছেলের জন্ম তারিখ ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারি।’

সে সময় মালিহা সরকারের হাতে স্যালাইন দেওয়া। সে কারো সঙ্গে কথা বলে না, সবার দিকে তাকিয়ে থাকে শুধু। সবার কান্না দেখে। মালিহা এখনো জানেই না তার খেলার সব সময়ের সাথী আর বেঁচে নেই! তখন মালিহা বলেন ‘কালকের চেয়ে আজ একটু ভালো লাগছে। কিন্তু শুতে কষ্ট হয়।মালিহার চাচা মনিরুল ইসলাম বলেন বাবার কাধে ছেলের লাশ আর মেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নিথর হয়ে পড়ে আছে। এই পরিবেশ কি কোনো বাবা সহ্য করতে পারে? টানা কয়েকদিন আমাদের দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কারো ঘুম-খাওয়া নেই। আমি এখনো মেনে নিতে পারছি না।

কী ঘটে গেল আমাদের সঙ্গে। জ্বর এলো আর প্রাণ ছিনিয়ে নিয়ে গেল।পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাইয়ান সরকার মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। মালিহা একটি বেসরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। গতকাল রাইয়ানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে। দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় তেজগাঁওয়ের রহিম মেটাল জামে মসজিদে। পরে তাকে দাফন করা হয়।মমিন সরকারের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার শেরনগর ইউনিয়নের মুকুন্দগাঁতী গ্রামে। বর্তমানে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকে। তিনি এসিআই কোম্পানির জোনাল সেলস ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *