Home » বিউটিকে খুন করেন বাবা, ধর্ষণ করেন বাবুল: পুলিশ

বিউটিকে খুন করেন বাবা, ধর্ষণ করেন বাবুল: পুলিশ

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরডটকম : হবিগঞ্জের আলোচিত বিউটি আক্তার হত্যার ঘটনায় তার বাবা জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিউটির বাবা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর বিউটিকে অপহরণ ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন বাবুল মিয়া। শনিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বিধান ত্রিপুরা। তিনি বলেন, বিউটির বাবা শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার রাতে একই ঘটনায় জড়িত ময়না মিয়াও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নিহত বিউটির নানি ফাতেমা বেগম ও ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা বেগম।

এসপি বলেন, বিউটির বাবা সায়েদ আলীসহ তিনজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা ইউপি সদস্য কলমচান বিবি ও তাঁর ছেলে বাবুল মিয়াকে ফাঁসানোর জন্য বিউটিকে হত্যা করেন। অন্যদিকে গ্রেপ্তার বাবুল মিয়া বিউটিকে অপহরণ ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বিধান ত্রিপুরা বলেন, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নবগঠিত ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্যপদে নির্বাচন করেন কলমচান বিবি ও একই গ্রামের ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা বেগম। নির্বাচনে কলমচান বিবি জয়ী হন। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে কলমচান বিবি ও আছমা বেগমের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। আছমার স্বামী ময়না মিয়া নির্বাচনের আগ থেকেই কলমচান বিবিকে নির্বাচন না করার অনুরোধ করে আসছিলেন। কিন্তু তা শোনেননি কলমচান বিবি। ময়না মিয়া ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২১ জানুয়ারি বিউটিকে অপহরণ ও দুই সপ্তাহ আটকে রেখে ধর্ষণ করেন কলমচান বিবির ছেলে বাবুল মিয়া। এ নিয়ে গ্রামে সালিসি বৈঠক হয়। কিন্তু তাতে কোনো সুরাহা হয়নি। পরে ময়না মিয়া বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে বোঝান যে বিউটি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে বাড়িতে রাখলে সায়েদ আলীর অপর দুই মেয়েকে ভালো জায়গায় বিয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু বিউটিকে হত্যা করলে বাবুল ও তাঁর মাকে ফাঁসানো যাবে। এতে বিউটিকে হত্যার প্রস্তাবে রাজি হন তার বাবা। পরে গত ১৬ মার্চ, ময়না মিয়া, সায়েদ আলী ও অপর এক ব্যক্তি বিউটিকে তার নানার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। লাখাই উপজেলার কোনো একটি স্থানে বিউটিকে হত্যা করা হয় এবং তার লাশ ওই দিন রাতে শায়েস্তাগঞ্জের ছাতাগর্ত হাওরে ফেলে রাখা হয়।

পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে সায়েদ আলী ও ময়না মিয়া ছাড়াও একজন পেশাদার খুনিকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়। বিউটির নানি ফাতেমা বেগম শুক্রবার রাতে আদালতে সাক্ষ্য দেন। তিনি আদালতকে বলেন, সায়েদ আলী, ময়না মিয়া ও অপর এক ব্যক্তি তাদের বাড়িতে গিয়ে বিউটিকে নিয়ে আসেন। হত্যাকাণ্ডে ময়না মিয়ার সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে তাঁর স্ত্রী আছমা বেগম শনিবার বিকেলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তার গত ২১ জানুয়ারি অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়। ওই ঘটনায় তার বাবা ৪ মার্চ হবিগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেন। তাতে বাবুল মিয়া (৩৫) ও তার মা কলমচান বিবিকে (৫৫) আসামি করা হয়। পরে ১৭ মার্চ শায়েস্তাগঞ্জ থানার ছাতাগর্ত হাওরে বিউটি আক্তারের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ১৮ মার্চ বিউটির বাবা বাদী হয়ে বাবুল মিয়া ও তাঁর মাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় কলমচান ও তাঁর ছেলে বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *