Home » গুজবেই সব শেষ, তুবা এখনো বলছে, ‘মা আসবে’

গুজবেই সব শেষ, তুবা এখনো বলছে, ‘মা আসবে’

গুজবেই সব শেষ হয়ে গেছে ছোট্ট শিশু তাসলিমা তুবার (৪)। হারাতে হয়েছে মা তাসলিমা বেগম রেনুকে। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলেই তুবা এখন বলছে, ‘মা ড্রেস আনতে গেছে। জুস আনতে গেছে। মা আসবেন। মা আমাকে ভাত খাইয়ে দিবে।’ আজ মঙ্গলবার দুপুরে তুবার বিষয়ে জানতে চাইলে তার খালা নাজমুন নাহার নাজমা এসব কথা জানান। এদিকে রেনু হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে স্থানীয়দের উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মায়ের নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে শিশু তুবাও মানববন্ধনে অংশ নেয়। ব্যানারে মায়ের ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল তুবা।

রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামে নানার বাড়িতে নানু ও খালাদের সঙ্গে আছে তুবা। মায়ের কথা ভুলছেই না সে। কাঁদছে মায়ের জন্য, মার হাতে খাবে, মার সঙ্গে ঘুমাবে এসব বায়না তার। মা ড্রেস নিয়ে ফিরবে এজন্য অপেক্ষা করছে সে। স্বজনরা জানায়, রেনুরা এক ভাই ও পাঁচ বোন। তিনি সবার ছোট ছিলেন। পড়ালেখা শেষে তিনি ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছিলেন। প্রাইভেটও পড়াতেন তিনি। পারিবারিক কলহের কারণে দুই বছর আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাঁর। বিচ্ছেদের পর ছেলে তাসফিক আল মাহি (১১) বাবার সঙ্গে থাকে। তাসলিমা তুবা থাকত মায়ের কাছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে বড় ভাই আলী আজগরের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল রেনুর। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হলো না তার। নির্মম মৃত্যুতে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

নিহত রেনুর বোন নাজমুন নাহার নাজমা বলেন, ‘তুবাকে আমরা মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, ওর মায়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। ও যাতে এই অন্ধকার জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে পারে।’ নাজমা বলেন, আদরের বোনটাকে এভাবে হারাতে হবে ভাবিনি। গুজব আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। গুজব ছড়িয়ে একজন নারীকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে এটি মেনে নেওয়া যায় না। ফুটফুটে দুটো বাচ্চার জীবন যারা নষ্ট করেছে তাদের যেন বিচার হয়। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যেন আর কোনো মানুষ এভাবে গুজবের বলি না হয়।

ছেলেধরা বলতে কিছু আছে বলে মনে হয় না বলে মন্তব্য করে নাজমা বলেন, কেউ হয়তো ইমেজ নষ্ট করার জন্য এসব করছে। তুবা ও তার ভাইকে খালা নাজমুন নাহার নাজমা নিজেদের কাছে রাখতে চান বলে জানান। তবে এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকায় গিয়ে ওদের বাবার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গত ২০ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাসলিমা বেগম রেনুকে (৪০) ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দুই ছেলেমেয়েকে ভর্তির জন্য সেখানে খোঁজ নিতে গিয়ে গুজবের কবলে পড়ে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরের দিন রোববার রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানের বাবার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর বোনের ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে আজ সকালে তাসলিমা বেগম রেনুর জন্য পরিবারিকভাবে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন এবং কবর জিয়ারত করা হয়।

সূত্র: এনটিভি

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *