সিলেটের প্রাচীন কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম সিলেট সরকারি কলেজ। সিলেটের টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত কলেজটিতে জন্মলগ্ন থেকেই সরকারিভাবে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা এবং ডিগ্রি (পাস) বিএ, বিএসএস ও বিবিএ বিষয়ে পাঠদান হয়ে আসছে। এছাড়া ২০১৭-১৮ সেশন থেকে পাঁচটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়েছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬ হাজার ৫৫০ জন। সিলেট-তামাবিল সড়কের পাশে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে দুরবর্তী মেধাবী শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয় ছাত্র ও ছাত্রীবাস। বর্তমানে কলেজটিতে ২টি হোস্টেল রয়েছে। একটি ছাত্রদের এবং অপরটি ছাত্রীদের জন্য। ছাত্রদের হোস্টেলটি দ্বিতল বিশিষ্ট ও ২টি ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত। অপর দিকে ছাত্রীদের হোস্টেলটি ৪ তলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক স্থাপনা।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে হোস্টেলগুলো চালু হওয়ার কিছুদিন পরেই রাজনৈতিক কারণে আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয় কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসটি। বহুদিন বন্ধ থাকার ফলে সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসটি এখন যেন ভূতুড়ে বাড়িতে রুপ নিয়েছে।
২০১০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে ছাত্রাবাসের দখল নিতে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা ছাত্রাবাসের ৫২টি কক্ষের দখল নেয়। এসময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কলেজ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকে অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ছাত্রাবাসটি।
কলেজের আবাসন সুবিধাবঞ্চিত কিছু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ছাত্রাবাসের ৫২টি কক্ষে ১৫৭ ছাত্র থাকতেন। কিন্তু এতদিন ধরে ছাত্রাবাসটি পুনঃসংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। সাকিব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দেশের বাড়ি সুনামগঞ্জ। সিলেটের মদিনা মার্কেট এলকায় একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করি। এখান থেকে প্রতিদিন ক্লাসে আসতে খুব কষ্ট হয়। সাকিব বলেন, ছাত্রাবাসটি চালু হলে খুব ভাল হত।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে ছাত্রাবাসটি পুনঃসংস্কারের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। রাজনৈতিক বাঁধার কারণে এ প্রকল্প আর বাস্তবায়ন করা যায়নি। যেকারণে এরপরে ছাত্রবাসটি সংস্কারের আর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। যেজন্য অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসের পথে আগাচ্ছিল সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসটি।
তবে গতকিছুদিন আগে ছাত্রাবাসটি নতুন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কলেজ কতৃপক্ষ। কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর নাছিমা হক খাঁন বলেন, ছাত্রাবাস না থাকায় ছাত্রদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে বন্ধ হওয়ার পরে পূর্বে এনিয়ে তেমন কোন তোড়জোড় হয়নি। বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিলেও নানা বাঁধার কারণে ছাত্রাবাসটি সংস্কার করা যাচ্ছিল না।
নাছিমা হক খাঁন বলেন, বিভিন্ন সময় এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে ছাত্রাবাসটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি বলেন, গতকিছুদিন আগে আবারও নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করি। বর্তমানে ছাত্রাবাসটির সংস্কার কাজ চলছে। তিনি বলেন, আশা করি আগামী বছরের প্রথম দিকেই ছাত্রাবাসটি চালু করা যাবে।
প্রতিনিধি