Home » সেতু ভেঙে উপবনের বগি খালে, নিহত ৫, আহত দুই শতাধিক

সেতু ভেঙে উপবনের বগি খালে, নিহত ৫, আহত দুই শতাধিক

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ভয়ানক দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরো অন্তত দুই শতাধিক।মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি গতকাল রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার বরমচাল স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দূরে ইসলামাবাদ এলাকায় পৌঁছালে পেছন দিকের বগিতে বিকট শব্দ হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সামনে বড়ছড়া ব্রিজ ভেঙে একটি বগি পড়ে যায়। আরো তিনটি বগি ব্রিজের পাশে উল্টে দুমড়েমুচড়ে যায়। এ ছাড়া অন্য দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।’

‘এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। হাসপাতালের নেওয়ার পথে আরো দুজন মারা যান। আহতদের কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেটের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে,’ বলেন কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার দুলাল চন্দ্র দাস।আজ সোমবার সকাল ৭টার দিকে স্টেশন মাস্টার আরো বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছেনি। বগির উদ্ধারকাজ ও সেতু মেরামতের কাজ শেষ হলে এই পথে পুনরায় রেল চলাচল স্বাভাবিক হবে।’

দুর্ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাত্রীদের উদ্ধারের কাজ শুরু করে বলে জানান সংস্থাটির সিলেট বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, তিনজনের লাশ প্রাথমিকভাবে আমরা উদ্ধার করেছি। আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরো একজন মারা গেছেন বলে আমরা শুনেছি। পেছনের ছয়টি বগির মধ্যে শেষ বগিটি ব্রিজ ভেঙে নিচে পড়ে গেছে। আরো তিনটি বগি পুরোপুরি লাইনচ্যুত হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি বগি আংশিক লাইনচ্যুত অবস্থায় আছে।’‘আমরা প্রতিটি বগি খুঁজে দেখেছি। আমরা ভিকটিম ও ডেডবডি উদ্ধার করেছি। সেগুলো এরই মধ্যে নিয়ে চলে গেছে। আপাতত মনে হচ্ছে, ওপরের বগিগুলোর মধ্যে কোনো লোকজন নেই,’ যোগ করেন ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধারকাজ তদারক করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে তিনটি ডেডবডি উদ্ধার করা হয়েছে। পরে আরো দুজন মারা যান। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। একশর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। একটা বগি ছড়ার (পাহাড়ি খাল, বর্ষাকালে এগুলোতে বেশ পানি থাকে) মধ্যে পড়ে গেছে। খুব বাজেভাবে পড়েছে। পুরো লাইনটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। ট্রেনের যে অংশটা দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি, সেটা খুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো সামনে চলে গেছে।’

রাশেদুল হক আরো বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসী খুব সহায়তা করেছে। এ কারণেই দ্রুত উদ্ধারকাজ শেষ করা গেছে। এখন ট্রেন ও মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।’এদিকে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত ৯০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ আহত যাত্রীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। চারজনের লাশ কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মর্গে রয়েছে।’

ট্রেনে থাকা যাত্রী কামাল আহমদ ও সাইদুর রহমান রাব্বী বলেন, তাঁরা ছয় বন্ধু সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাতের উপবন এক্সপ্রেসে সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। বরমচাল নামক একটি জায়গায় আসার পর তাঁদের পেছনের তিনটি বগি ছিটকে যাওয়ার কথা শুনেছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে অন্য বগিতে থাকা যাত্রীরা বেঁচে গেছেন। তাঁরাও বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন।এদিকে স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীরা জানান, ট্রেনটিতে মোট ১৭টি বগি ছিল। ট্রেনটি অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিল। কারণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরাইলের শাহবাজপুরে বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় ঢাকা-সিলেট সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ রয়েছে।

এ কারণে ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ছিল।
একটি ভিভিওচিত্রে দেখা যায়, ছড়াটিতে পানি রয়েছে। সেখানে একটি বগি পড়ে রয়েছে। লাইনটি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এলাকাবাসী লাইট দিয়ে সেখানে অনুসন্ধান চালান। পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে আহতদের তুলে দিচ্ছে। ব্যক্তিগত সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়েও কেউ কেউ আহতদের সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে। রাতের বেলায়ও ঘটনাস্থলে প্রচুর লোকজন জড়ো হয়। দুর্ঘটনার পর কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অনেকে এসে জড়ো হয়। জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত হন।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, যে জায়গাটিতে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেখান থেকে মৌলভীবাজার যেতে বেশ সময় লাগে। তার চেয়ে বরং সিলেটে যোগাযোগ অনেক সহজ। এ কারণেই অধিকাংশ আহতদের সিলেট পাঠানো হচ্ছে।  স্থানীয় মোহাম্মদ জাহির আলী বলেন, ‘রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ হয়। আমরা তখন বাড়ি থেকে দৌড়ে আসি। দুর্ঘটনা দেখে আমি কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিই। পাঁচবার ফোন হওয়ার পরে ধরে। তারপর তারা বলে, সিলেটে ফোন দেওয়ার জন্য। আমরা তখন নাম্বার জোগাড় করে সিলেটে ও রেলে ফোন দিই। প্রায় দুইশজনের মতো মানুষের হাত-মাথা ফাটছে। এক ঘণ্টা পর কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস আর দেড় ঘণ্টা পর সিলেট ফায়ার সার্ভিস আসছে।’
স্থানীয় আরেক যুবক (২৬) বলেন, ‘আমাদের বাড়ি রেললাইনের পাশে। যখন দুর্ঘটনা ঘটছে, ঘরের দেয়াল পর্যন্ত কাঁপছে। আমরা দৌড়ে আসছি। বরমচালের স্টেশনে কালা মিয়ার বাজার থেকে সব মানুষ দৌড়ে আসছে। সবাই উদ্ধার করছে।’  

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *