লো স্কোরিং ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারিয়ে দিয়ে চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেট জমিয়ে দিয়েছে এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। শুক্রবার রাতে লিডসের হেডিংলি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৩২ রান করে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা।২৩৩ রানের সহজ জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে জো রুট ও বেন স্টোকস ছাড়া ইংল্যান্ডের কোন ব্যাটসম্যানই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৪৭ ওভারে ২১২ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংলিশরা। ফলে অসাধারণ এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দিমুথ করুনারত্নের দল। স্বল্প রানের পুঁজি নিয়েও শ্রীলঙ্কার এই অবিশ্বাস্য জয়ের মূল কারিগর তারকা পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। দ্রুত সময়ে ইংলিশদের চার টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন এই গতি দানব। তাতেই জয়ের ভীত পেয়ে যায় লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কার এই জয়ে সেমিফাইনালের টিকেট পাওয়ার লড়াই আরও জমে উঠল। দুর্দান্ত জয়ে বাংলাদেশকে টপকে পয়েন্ট তালিকার পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছেন মালিঙ্গা-ম্যাথুসরা। বর্তমানে ছয় ম্যাচ শেষে শ্রীলঙ্কার ভান্ডারে জমা ৬ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ছয় নম্বরে নেমে যাওয়া টাইগারদের পয়েন্ট ৫। আর ৮ পয়েন্ট নিয়ে আগের তিন নম্বরেই আছে ইংল্যান্ড। ১০ ও ৯ পয়েন্ট করে নিয়ে যথাক্রমে তালিকার এক ও দুইয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। উল্লেখ্য, পয়েন্ট তালিকার সেরা চারটি দল সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে।
লঙ্কানদের হারাতে পারলে ইংল্যান্ড সেমিফাইনালের কাছাকাছি পৌঁছে যেত। কিন্তু ক্রিকেটের জনকদের এই হারে শেষ চারে ওঠার লড়াইটা আরও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। এখন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, ইংল্যান্ডের পাশাপাশি রেসে টিকে থাকল শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশও। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও সম্ভাবনা রয়ে গেছে। এই হারে ইংল্যান্ডের সেমির মিশন কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে গেল! কেননা শেষ তিনটি ম্যাচেই তাদের লড়তে হবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। ম্যাচগুলো হলো- ২৫ জুন অস্ট্রেলিয়া, ৩০ জুন ভারত ও ৩ জুলাই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে লঙ্কানদের জন্য অপেক্ষা করছে কিছুটা হলেও সহজ প্রতিপক্ষ! তাদের শেষ তিন ম্যাচগুলো হলো-২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা, ১ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ৬ জুলাই ভারতের বিরুদ্ধে।
এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের পরও লড়াইয়ের পুঁজিটা খুব একটা বড় ছিল না শ্রীলঙ্কার। তবে দারুণ বোলিংয়ে এই পুঁজিকেই যথেষ্ট প্রমাণ করেছেন মালিঙ্গা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভারা। যে কারণে বেন স্টোকসের ব্যাটিং বীরত্বের পরও রোমাঞ্চকর ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জমিয়ে দিয়েছে লঙ্কানরা। অথচ দ্বীপদেশটির ইনিংস শুরু হয় ব্যাটিং বিপর্যয় দিয়ে। সতীর্থদের যাওয়া-আসার মাঝে অবিচল ছিলেন দলটির সাবেক অধিনায়ক ম্যাথুস। একপ্রান্তে তিনি লড়াই চালিয়ে যান বুক চিতিয়ে। তাতেই অন্তত লড়াই করার পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা। ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান দলপতি দিমুথ করুনারত্নে। কিন্তু চারজন ছাড়া কেউই সুবিধা করতে পারেননি।
এর মধ্যে এগিয়ে ছিলেন ম্যাথুস। পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি ৮৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাথুসের বীরোচিত ইনিংসে ভর করেই নির্ধারিত ৫০ ওভার খেলতে পারে শ্রীলঙ্কা। ৯ উইকেট হারিয়ে দ্বীপদেশটির ঝুলিতে জমা হয় ২৩২ রান। মূলত ইংলিশ পেসার জোফরা আর্চারের দুরন্ত গতিতে বেসামাল হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। শুরুতেই দুই উইকেট পতনের পর চাপ সামলানোর চেষ্টা করেন ওয়ান ডাউনে নামা আভিস্কা ফার্নান্ডো। আর্চার ও ক্রিস ওকসকে মোকাবিলা করে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ৪৯ রানে তাকে ফেরান মার্ক উড।
শ্রীলঙ্কার দেখেশুনে খেলায় বড় আঘাত হানেন স্পিনার আদিল রশিদ। পরপর দুই বলে তিনি কুশল মেন্ডিস ও জীবন মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দেন। বিপর্যয়ের মধ্যে দলের হাল ধরেন ম্যাথুস। ১১৫ বলে ৮৫ রান করেন সাবেক এই অধিনায়ক। ইনিংসটি তিনি সাজান পাঁচটি চার ও একটি ছয়ে। এছাড়া কুশল মেন্ডিস করেন ৪৬ রান। ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে আর্চার ও উড তিনটি করে উইকেট লাভ করেন। দুই উইকেট নেন স্পিনার আদিল রশিদ।
অপেক্ষাকৃত সহজ জয়ের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। দলীয় ৭৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে গেলে ইংলিশদের হাল ধরেন জো রুট ও বেন স্টোকস। কিন্তু দলীয় ১২৭ রানে রুট সাজঘরে ফিরলে আবারও পতন শুরু হয়ে যায় স্বাগতিকদের। একপ্রান্তে স্টোকস উইকেট আঁকড়ে থাকলেও অন্যপ্রান্তে সতীর্থরা আসা-যাওয়ায় ব্যস্ত থাকেন। প্রথমে মালিঙ্গা গতিতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর শেষদিকে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ঘূর্ণিবলে কুপোকাত হন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা।
শেষ পর্যন্ত তিন ওভার আগেই ২১২ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। আর স্মরণীয় জয় নিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখলো শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ডের স্টোকস ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন। আর রুট করেন ৫৭ রান। লঙ্কানদের হয়ে মালিঙ্গা ৪৩ রানে ৪ ও ডি সিলভা ৩২ রানে ৩ উইকেট লাভ করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কা : ২৩২/৯; ৫০ ওভার (করুনারত্নে ১, কুশল পেরেরা ২, ফার্নান্ডো ৪৯, কুশল মেন্ডিস ৪৬, ম্যাথুস ৮৫*, জীবন মেন্ডিস ০, ডি সিলভা ২৯, থিসারা ২, উদানা ৬, মালিঙ্গা ১, প্রদীপ ১*; ওকস ১/২২, আর্চার ৩/৫২, উড ৩/৪০, রশিদ ২/৪৫)
ইংল্যান্ড : ২১২/১০; ৪৭ ওভার (ভিন্স ১৪, বেয়ারস্টো ০, রুট ৫৭, মরগান ২১, স্টোকস ৮২*, বাটলার ১০, মইন ১৬, ওকস ২, রশিদ ১, আর্চার ৩, উড ০; মালিঙ্গা ৪/৪৩, ডি সিলভা ৩/৩২, উদানা ২/৪১)।
ফল : শ্রীলঙ্কা ২০ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)।
প্রতিনিধি