শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরডটকম :
সিলেটে যাত্রীদের বিড়ম্বনার নাম ‘রিকশাভাড়া’। রিকশা ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে চালকদের বসচা যেনো একেবারেই নৈমিত্তিক। বিশেষ করে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন অতিরিক্ত রিকশা ভাড়া নিয়ে। রিকশা চালকদের সাথে যাত্রীদের ঝুটঝামেলা প্রতিদিনই লেগে থাকে ভাড়া নিয়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রিকশার ভাড়া নির্ধারিত করে তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয় সিলেট নগরীর ৫১টি পয়েন্টে। কিন্তু আজ অবধি সেই নির্ধারিত ভাড়া বাস্তবায়নে নেই সিটি কর্পোরেশনের কোনো তৎপরতা। নগরীর বন্দরবাজার, রিকাবীবাজার, মদিনা মাকের্ট, বাগবাড়ি, ওসমানী মেডিকেল, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, চৌখিদিখি, শাহী ঈদগাহ, বালুচর, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, নাওয়রপুল, সোবহানীঘাট, রোজভিউ হোটেলের সামনে, উপশহর, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, কিনব্রিজ, রেলস্টেশন, সুরমা মাকের্ট পয়েন্ট, লামাবাজারসহ ৫১টি পয়েন্টে ভাড়ার তালিকা টানিয়েই দায় সাড়ছে সিটি কর্পোরেশন। তাই ভাড়া নির্ধারণের পরও এ-সংক্রান্ত বিড়ম্বনা ফুরায়নি। রিকশা ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে ঝুট-ঝামেলার চিত্র এখনও নৈমিত্তিক।
সিলেট পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনের উন্নীত হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ১৬ বছর। কিন্তু এখনও রিকশার ভাড়া নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের বিষয় সুরাহা হয়নি। পৌরসভার সময় থেকেই নগরীর রিকশার জন্য ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তখন নগরীর পথেঘাটে চলাচলকারী রিকশার সংখ্যা ছিল মাত্র হাজার দশেক। সিটি কর্পোরেশনের উন্নীত হওয়ার পর সেই সংখ্যা বেড়েছে প্রতিদিন। বর্তমানে সিলেট নগরীতে রিকশার সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার।
২০১৩ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) সর্বশেষ নির্বাচনের পর রিকশা ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়, নড়েচড়ে বসে এ ব্যাপারে গঠিত কমিটিও। অবশেষে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাড়াও নির্ধারণ করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানের ব্যবধান বিবেচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এর বাইরে কিলোমিটারপ্রতি ১০ টাকা ও ঘণ্টাপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
২০১৩ সালের নির্বাচনে জিতে সিসিকের মেয়র হন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। এর আগে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান টানা তিনবার সিটি মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। তার আগে পৌরসভা চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। কামরানের আগে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল ছিলেন সিলেট পৌরসভার মেয়র। তাদের প্রত্যেকের আমলেই নগরবাসী রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে তার ব্যস্তবায়ন করার দাবি তুলেছেন।
রিকশা চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া দাবি; এ নিয়ে চালক-যাত্রীর মধ্যে মারামারি-বাহাসের প্রেক্ষাপটে ভাড়া নির্ধারণের দাবি তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বদরউদ্দিন কামরান মেয়র থাকাবস্থায় কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও ভাড়া নির্ধারণে সফল হতে পারেননি। আরিফুল হক মেয়র হওয়ার পর এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মতামত নেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে ভাড়ার তালিকা প্রণয়ন করে টানানো হয় নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে। কিন্তু তার ব্যস্তবায়ন হয় নাই আজ অবধি।
রিকশাভাড়া নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হওয়া কলেজ ছাত্রী বলেন, অতিরিক্ত রিকশা ভাড়া দিতে হয় প্রতিদিন। সকালে আমরা যখন কলেজে যাই তখন রিকশাওয়ালারা অতিরিক্ত ভাড়া চায়। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, রিকশাভাড়া নিয়ে তাদের প্রায়ই ঝামেলা পোহাতে হয় । ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ ভাড়ার ব্যবস্থা করা হলে এ সমস্যা দূর হতো।
বার্তা বিভাগ প্রধান