মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার চার্জশিটভূক্ত ১৬ জনসহ মোট ২১ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতে নিয়ে আসার সময় এরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে চিৎকার করতে থাকেন। বলতে থাকেন নুসরাত আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া আসামিরা হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় বাদীদের দিকে তেড়ে আসেন। তাদের আদালতে উঠানো হলে বাদী পক্ষের আইনজীবীদের লক্ষ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালিও করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ফেনী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের আদালতে ২১ আসামিকে হাজির করা হয়।মামলাটি পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করেন আদালত। একইসঙ্গে মামলাটির পরবর্তী তারিখ ১০ জুন ধার্য করেছেন আদালত।
নুসরাতের ভাই বাদী আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ তার অনুগত বাহিনীর কয়েকজন হাতে হ্যান্ডকাপ ও কোমরে দড়ি বাধা অবস্থায় বাদীদেরকে লক্ষ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালিসহ হামলা করার জন্য তেড়ে আসার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে।
নুসরাতের ভাই জানান, তিনি চার্জশিটে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সাংবাদিক আবুল হোসেন রিপনকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। কারণ, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও সাংবাদিক আবুল হোসেনের যোগসাজশে গ্রেফতারকৃত আসামিরা তার বোন নুসরাতের গায়ে আগুন লাগিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।তিনি বলেন, মামলার ধার্য তারিখে তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে উক্ত দুই ব্যক্তিকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ট্রাইব্যুনালে বিচারকের নিকট আবেদন করবেন।
এর আগে গত বুধবার বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ও আওয়ামী লীগের দুই স্থানীয় নেতাসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে ফেনীর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতে প্রত্যেক আসামির মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়। অধ্যক্ষ সিরাজকে আসামি করা হয়েছে নুসরাতকে হত্যার ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে।
কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. গোলাম জিলানী জানান, আগামী ১০ জুন নারী নির্যাতন ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হবে।এ মামলার শুরুতে একজন আইনজীবী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার পক্ষে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এরপর ফেনী জেলা আইনজীবী সমিতির কোন আইনজীবী যেন আসামিদের পক্ষে না দাঁড়ান, সে জন্য অনুরোধও জানানো হয়।
ফলে, গত ২ মাসে আসামিদের পক্ষ নিয়ে কোনো আইনজীবীকে আদালতে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যার মামলাটি আদালতে উঠানো হলে, বারের সিনিয়র আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু আসামি কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মোকছেদ আলমের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে পরবর্তী ধার্য তারিখে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার পরামর্শ দেন।
২৭ মার্চ অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান। এ সময় মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে নুসরাত ওই ভবনের চার তলায় যান। সেখানে বোরখা পরা চার-পাঁচজন তাকে সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
প্রতিনিধি