Home » ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে খোলা আকাশের নীচে ফেলে গেল সন্তানরা

৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে খোলা আকাশের নীচে ফেলে গেল সন্তানরা

কৌশলে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মায়ের কাছ থেকে ১২ কাঠা জমি লিখে নিয়েছে ছোট ছেলে। এ কারণে বড় দুই ছেলে মায়ের প্রতি অসন্তুষ্ট। খোঁজ-খবর নেয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। এ নিয়ে সালিশ বৈঠকও হয়েছে। যেহেতু মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কৌশলে জমি লিখে নিয়েছে, তাই ভরণপোষণের ভারও ছোট ছেলের ওপর বর্তায়। তবে ছোট ছেলেও তাকে আর জায়গা দেননি। ছেলে ও নাতি মিলে বৃদ্ধাকে ফেলে আসেন রাস্তায়। গত ৩দিন খোলা আকাশের নিচে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর অবশেষে এলাকার এক জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় হাসপাতালের বিছানায়। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার উথুরী গ্রামের। পুলিশ রোববার সন্ধ্যায় বৃদ্ধা হাজেরা খাতুনের বড় ছেলে আব্দুস সাত্তার ও নাতি তাফাজ্জল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। 

জানা যায়, বছর দুয়েক আগে ওই বৃদ্ধার ৩ ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে সাইফুল কৌশলে মায়ের ১২ কাঠা জমি লিখে নেন। এরপর থেকে অপর দুই ছেলে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মায়ের প্রতি চরম অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি অসদাচরণ শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার ছোট ছেলে সাইফুল তার মাকে মারধর করে বাড়ির সামনের সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখে আসে। ৩ দিন সেখানে পড়ে থাকার পর বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে শনিবার রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সোবহান ও কালা মিয়া প্রতিবেশীদের সহায়তায় বৃদ্ধা হাজেরা বেগমকে উদ্ধার করে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ব্যাপারে ওই ইউপি সদস্য বৃদ্ধার ছেলে ও নাতিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। 

থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ, পুলিশ ও এলাকাবাসী অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উথুরী গ্রামের মৃত রেসমত আলীর স্ত্রী হাজেরা বেগমের তিন ছেলে-সাইফুল ইসলাম (৪০), সোহরাব উদ্দিন (৪৫) ও আব্দুস সাত্তার (৫০)। প্রায় ১৬ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার সময় হাজেরা বেগমের নামে ১২ কাঠা জমি লিখে দেন। স্বামী মৃত্যুর পর ছেলেরা হাজেরা বেগমকে কিছুদিন ভরণপোষণ দেন। এক পর্যায়ে ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম গোপনে বৃদ্ধ মায়ের কাছ থেকে ১২ কাঠা জমি নিজের নামে লিখে নেন। এ খবর পাওয়ার পর অন্য ছেলেরা মায়ের ভরণপোষণ ও খোঁজখবর নেয়া বন্ধ করে দেন। 

এই পরিস্থিতিতে হাজেরা বেগম ছোট ছেলে সাইফুলের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন। তবে কিছুদিন পর সাইফুলও তার মাকে ভাত কাপড়ের কষ্ট দিতে থাকেন। তিনবেলার মধ্যে কখনো একবেলা, আবার কোনো কোনোদিন খাবারই দেয়া হতো না হাজেরা বেগমকে। খাবার চাইলে উল্টো মাকে মারধর করতো সাইফুল। 

এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বিচার সালিশও হয়েছে। কিন্তু মায়ের জমি লিখে নেয়ায় বিচার সালিশে সাইফুলকেই তার মা হাজেরা বেগমের ভরণপোষণের দায়িত্ব দেন সালিশকারীরা। তবে সাইফুল বিচার সালিশ না মেনে বৃহস্পতিবার সকালে মাকে মারধর করে বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ফেলে আসেন।

গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) আবদুল আহাদ খান বলেন, ছেলেদের হাতে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা এমন নির্যাতিত হবেন বিষয়টি ভাবতেও কষ্ট হয়। হাসপাতালে গিয়ে দুখী ওই বৃদ্ধার খোঁজ নিয়েছি। পাশাপাশি বৃদ্ধার এক ছেলেসহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে। আইনী ব্যাপারে পুলিশ যা যা করার দরকার তাই করবে। 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *