Home » ‘রুনি, ইব্রাদের ছাপিয়ে গেল রোনাল্ডো-জাদু’

‘রুনি, ইব্রাদের ছাপিয়ে গেল রোনাল্ডো-জাদু’

ডেস্ক নিউজ : 

পাখি, মহাকাশের উড়ন্ত চাকতি, বিমান! নাকি অন্য গ্রহ থেকে আসা কেউ? না, এগুলোর কোনওটাই নয়। এ তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো! তুরিনের মাঠে মঙ্গলবার রাতে রোনাল্ডোর অবিশ্বাস্য গোল দেখার পরে এটাই আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম জুভেন্তাস ম্যাচটা শেষ হওয়ার পরেও রিপ্লে-তে বার বার রোনাল্ডোর দ্বিতীয় গোলটা দেখাচ্ছিল। এই প্রতিবেদন লেখার আগে ইউটিউবে গোলটা আরও বার কুড়ি দেখে ফেলেছি। বার বার গোলটা দেখার পরেও আমার ঘোর কাটছে না। গত দশ বছরে বিশ্ব ফুটবলে রোনাল্ডোর অনেক দর্শনীয় গোল দেখেছি। কিন্তু জুভেন্তাসের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে ন’ফুটেরও বেশি উচ্চতা থেকে বাইসাইকেল ভলিতে করা ওর দ্বিতীয় গোলটা এ পর্যন্ত আমার দেখা সেরা গোল।

বিশ্ব ফুটবলে এ রকম গোল যে এ বারই প্রথম দেখলাম তা নয়। এর আগে রিভাল্ডো, ওয়েন রুনি, ইব্রাহিমোভিচ-রা করে গিয়েছে। ওদের পর্যায়ে আমি খেলিনি। কিন্তু  সত্তর দশকে এ রকম  গোল করতে দেখেছি শ্যাম থাপা-কে। কিন্তু কার্ভাহাল-এর ক্রস থেকে এই গোলটা মনে গেঁথে রাখার মতো। তাও আবার বিপক্ষে বারজাগলি ও কিয়েল্লিনি-র মতো ডিফেন্ডার। গোলকিপার জানলুইজি বুফন। ম্যাচের পরে টিভিতেই দেখলাম, রোনাল্ডো ওই বিষ্ময়কর বাইসাইকেল ভলিটি নিয়েছে মাটি থেকে ২.৭৭ মিটার উপর থেকে। অর্থাৎ ৯ ফুটের-ও বেশি উচ্চতা থেকে। গোললাইন থেকে প্রায় ১৮ গজ দূর থেকে নেওয়া রোনাল্ডোর ওই ভলির নিখুঁত টাইমিং আর বলে পা লাগানোর পরে তার বুলেটের মতো গতি। এত দ্রুত যে বুফন নিজের রিফ্লেক্সও কাজে লাগিয়ে গোল বাঁচানোর সময় পায়নি।  অবিশ্বাস্য গোল! এখনকার কলকাতা ময়দানের কিছু ফুটবলার অবসরে প্লে-স্টেশন খেলে। রোনাল্ডো যেন গোটা বিশ্বকে ওর এই ঐতিহাসিক গোলের মাধ্যমে প্লে-স্টেশনের বিনোদন দিয়ে গেল।

রুনি বা রিভাল্ডো মনে হয় না এতটা উপরে উঠে চকিতে এ রকম গোল করে গিয়েছিল। আর জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ বক্সের বাইরে ৪০ মিটার দূর থেকে ওর সেই ‘প্রপেলার ভলি’ থেকে গোল করেছিল বটে। কিন্তু ওর কৃতিত্বকে খাটো না করেই  বলছি, সেক্ষেত্রে গোলটা কিন্তু অনেকটাই কাকতালীয় ভাবে হয়ে গিয়েছিল। বরং এই গোলটার কিছুটা আশেপাশে থাকবে গত শনিবারই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ওয়েস্ট ব্রম-এর বিপক্ষে বার্নলি-র অ্যাশলে বার্নস-এর গোলটা। বারো বছর আগে লা লিগায় ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার রোনাল্ডিনহোর গোলটাও এর কাছাকাছি। কিন্তু রোনাল্ডো ওদের সবাইকে ছাপিয়ে চলে গিয়েছে।

ইতালি চার বারের বিশ্বকাপ জয়ী দেশ। ওদের ফুটবল ঐতিহ্য কোনও অংশে ব্রাজিল, জার্মানি, স্পেনের চেয়ে কম নয়। রোনাল্ডোর এই অবিশ্বাস্য গোলের পরে দেখলাম স্টেডিয়ামে উঠে দাঁড়িয়ে জুভেন্তাসের সমর্থকরাও হাততালি দিচ্ছেন। এতেই বোঝা যায়, রিয়াল মাদ্রিদের দ্বিতীয় গোলটা কেন ‘হল অব ফেম’-এ ঢুকে পড়ার ক্ষমতা রাখে।

ম্যাচটা বার করার জন্য রিয়াল মাদ্রিদ ম্যানেজার জিনেদিন জিদান একটা মোক্ষম চাল দিয়েছিলেন। তা হল শুরু থেকেই বল তাড়া কর। বল জুভেন্তাসের অর্ধে থাকলেও। তা হলেই খেদিরা, কিয়েল্লিনি-রা  ভুল পাস করতে বাধ্য হবে। আর সেই বল ধরে দ্রুত পৌঁছে যাওয়া যাবে জুভেন্তাস রক্ষণে। তিন মিনিটে রিয়ালের প্রথম গোল ঠিক এ ভাবেই। এক্ষেত্রেও সেই রোনাল্ডো ম্যাজিক। ইস্কো যখন বলটা বাড়িয়েছিল তখন রোনাল্ডো যে জায়গায় দাঁড়িয়ে সেখান থেকে ওর বাঁ পা-টা আগে যাবে। কিন্তু রোনাল্ডো গোলটা করে গেল ডান পা ছুঁয়ে। রিয়ালের তৃতীয় গোলের সময়ও যে ভাবে বারজাগলি-দের ট্যাকল করার দেরির সুযোগে মার্সেলোর সঙ্গে রোনাল্ডো ওয়ান-টু খেলে ওকে ফাঁকা জায়গা করে দিল, সেটাও চোখে ভাসছে। সব মিলিয়ে তুরিনে একটা ‘রোনাল্ডো শো’ হল বলে আমার মনে হয়।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *