আল্লাহই ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবেন।’ চারপাশের সন্তানদের দেখিয়ে এ মন্তব্য করলেন ৫৭ বছর বয়সী গুলজার খান। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে ছিল নানা বয়সী ২৩ সন্তান। বাকি ১৩ সন্তান আশপাশে কোথাও ছিল।
আরও এক সন্তান আসন্ন। তবে এত সন্তান নিয়ে মোটেও বিচলিত নন তিনি। তার ভাষায়, আল্লাহ ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবেন। তা ছাড়া পারিবারিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য বেশি সন্তান প্রয়োজন। তার মতোই ভাবনা বড় ভাই মাস্তান খান ওয়াজিরের (৭০)। ভাইয়ের মতো।
তারও ৩ স্ত্রী। তবে ভাইয়ের তুলনায় তার সন্তান কম মাত্র ২২ জন। তার নাতি-নাতনির সংখ্যা এত বেশি যে সংখ্যায় ঠিক কত তা তিনি বলতে পারেন না। আর এ দুজনের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই এমন আরেক জন হচ্ছেন জান মোহাম্মেদ। তারও তিন স্ত্রী। সন্তান সংখ্যা ৩৮।
তার লক্ষ্য আরেকটি বিয়ে করে সন্তানসংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করা। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ৯৬ সন্তানের জনক এই ৩ জনের বাড়িই পাকিস্থানে। খবরে বলা হয়েছে, বেশি সন্তান গ্রহণের কারণে পাকিস্থানে এখন জনসংখ্যা ঊর্ধ্বগতিতে বাড়ছে। গত ১৯ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি হারে জনসংখ্যা বেড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সন্তান জন্মদানে পাকিস্থান এখন শীর্ষে। সেখানে একজন নারী গড়ে ৩ সন্তানের জন্ম দেন। ১৯৯৮ সালে পাকিস্থানের জনসংখ্যা সাড়ে ১৩ কোটি ছিল। এখন তা ২০ কোটি ছুঁই–ছুঁই। ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। পাকিস্থানের খাইবার পাখতুনখাওয়ার দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বানুর বাসিন্দা ৩৬ সন্তানের জনক গুলজার খান বলেন, ‘আল্লাহ এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।
মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাই কেন আমি শিশু জন্মের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বাধা দেব?’ ইসলাম জন্মনিয়ন্ত্রণ সমর্থন করে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শক্তিশালী হতে চেয়েছি’। তিনি বলেন, তার এত সন্তান হওয়ায় সবাই মিলেই একটি পুরো ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে পারে। তাদের খেলার জন্য কোনো বন্ধুরও প্রয়োজন হয় না।
তার ৩য় স্ত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা বলেও তিনি জানান। গুলজার খানের ১৫ ভাইবোনের একজন মাস্তান খান ওয়াজিরের সন্তান ২২ জন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের খাবার ও সম্পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু লোকজনের বিশ্বাস কম।’
৩৮ সন্তানের জনক জান মোহাম্মেদ বাস করেন বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটায়। গত বছর এএফপির সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছিলেন ৪র্থ বিয়ে করে সন্তানসংখ্যা ১০০–তে উন্নীত করা তার আকাঙ্ক্ষা। এবার এএফপির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, তাকে বিয়ে করতে এখনো কেউ রাজি হয়নি।
কিন্তু তিনি আশা ছেড়ে দেননি। তিনি বলেন, ‘যত মুসলিম জন্মাবে, তত শত্রুরা ভয় পাবে। মুসলিমদের বেশি বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া উচিত।’ নারীদের মতামত দেওয়ার অধিকার থাকলে এ সমস্যা সমাধান করা সহজ হতো বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির নারী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আইশা সারওয়ারি।
বার্তা বিভাগ প্রধান