বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে খুলনার ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। রবিবার (৫ মে) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পাটকলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
জানা যায়, বেতন পরিশোধের দাবিতে রবিবার সকাল থেকে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করে। দুপুর ২টায় স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা নিজ কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় এবং উৎপাদন বন্ধ রাখে। স্টার জুট মিলের উৎপাদন বন্ধের খবর অন্যান্য পাটকলের শ্রমিকদের কাছে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা সন্ধ্যা ৬টায় প্লাটিনাম মিলের উৎপাদন বন্ধ করে। এসময় আন্দোলনকারীরা বিআইডিসি রোড়ের দুই পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। রাত সোয়া ৮টায় ক্রিসেন্ট ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। রাত সাড়ে ৯টার পর খালিশপুর, আলিম, ইস্টার্ণ, জেজেআই ও কার্পটিং জুট মিলেও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
পাটকল শ্রমিক আবুল কাশেম জানান, ‘বিজেএমসি কয়েক দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করেনি। আমরা একপ্রকার না খেয়ে কাজ করছি। সামনে রোজার কথা চিন্তা করেও পাটকল শ্রমিকদের প্রতি কোনও দয়া মায়া হলো না।’
স্টার জুট মিলের শ্রমিক কালাম জানান, ‘আমরা পারিবার নিয়ে গত ৩ মাস ধরে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদের জন্য কিছু করুন।’
শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান জানান, ‘আজ সোমবার বেলা ১১টায় ক্রিসেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সিবিএ-নন সিবিএ এর সভা থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে পাটকল শ্রমিক লীগের ৯ দফা দাবিতে গতকাল রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ক্রিসেন্ট জুটমিলের গেটে এক শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মো. মুরাদ হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন, এস এম আজম, মো. বাচ্চু মিয়া, জাহিদ হোসনে জাহাঙ্গীর ও মো. ওমর ফারুক।
উল্লেখ্য, বকেয়া পাওনাসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে ৯৬ ঘণ্টা ধর্মঘট ও ৪ ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচীর ডাক দেয় পাটকল শ্রমিক লীগ। গত ১৫ এপ্রিল এ আন্দোলনের ১ম দিনে কর্মসূচী চলাকালে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে শ্রমিকলীগ ও সিবিএ নন-সিবিএ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহের মজুরী, ৩ মাসের বেতন ও আগামী ১৮ মে’র মধ্যে মজুরি কমিশনের অর্থের হিসাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বৈঠকে। সে অনুযায়ী লিখিতও দেন বিজেএমসির চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাসিম। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ১০ সপ্তাহের মজুরী ও ৩ মাসের বেতন পরিশোধে বিজেএমসি ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শ্রমিক নেতাদের কাছ থেকে এক সপ্তাহ সময় নেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান