ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ রবিবার রাতে সারাদেশে পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শবেবরাত পালিত হবে। বিশেষ রাতটিকে মুসলিম সম্প্রদায় সৌভাগ্যের রজনী হিসেবেই বিশ্বাস করেন। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতটি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ পালন করে সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মসজিদে মসজিদে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় রাত পার করবেন।পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শবে বরাত ঘিরে আতশবাজিসহ সব ধরনের ক্ষতিকারক ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, শবেবরাত মুসলমানদের জন্য এক মহিমান্বিত ও বরকতময় পবিত্র রজনী।
মাহে রমজান ও সৌভাগ্যের আগমনী বারতা নিয়ে পবিত্র লায়লাতুল বরাত প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের মাঝে সমাগত। উপমহাদেশে শবেবরাত সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালিত হয়। মানবজাতিকে আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয় পবিত্র এই রজনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, সৌভাগ্যের এই রজনী মানবজাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত।
এই রাতে তিনি ক্ষমা প্রদর্শন এবং প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন। পবিত্র শবেবরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই। তিনি আরও বলেন, আসুন, সব ধরনের কুসংস্কার ও কূপম-ূকতা পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সব স্তরে প্রতিষ্ঠা করি। শবেবরাতের মর্যাদাপূর্ণ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।
মহিমান্বিত এই রাতে সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকবেন। দিনে রোজা রাখবেন অনেকে। দান-খয়রাত করবেন। বিগত জীবনের পাপ মার্জনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করবেন। ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি হরেক রকম হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরি করা হবে।এসব খাবার বিতরণ করা হবে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে। সন্ধ্যার পরে অনেকে যাবেন কবরস্থানে। চিরনিদ্রায় শায়িত আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করবেন। আরবি দিনপঞ্জিকা অনুসারে শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। শবেবরাত মুসলিমদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। তাই শবেবরাতের রাত থেকে আসন্ন রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়।
এদিকে লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাদ মাগরিব থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রাতব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, কুরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, কিয়াম, জিকির, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররমে ‘শবেবরাতের ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন তেজগাঁও মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাক আল আযহারী। রাত ৯টা ৫ মিনিটে ‘ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব’ শীর্ষক ওয়াজ-মাহফিলে বয়ান করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ‘শবেবরাত ও রমজানের তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা এহসানুল হক জিলানী।
রাত ১টা ৫৫ মিনিটে ‘তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। সব শেষে ফজরের নামাজের পর আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। শবে বরাত উপলক্ষে আতশবাজিসহ সব ধরনের ক্ষতিকারক ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
গতকাল শনিবার ডিএমপি পুলিশ কমিশনার স্বাক্ষরিত এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শবেবরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২১ এপ্রিল (আজ রবিবার) সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২২ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত ক্ষার জাতীয় বা বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ।
প্রতিনিধি