Home » ১৮ বছর পরও শুরাহ হয়নি রমনা বটমূলের বোমা হামলা

১৮ বছর পরও শুরাহ হয়নি রমনা বটমূলের বোমা হামলা

দীর্ঘ পাঁচ বছর স্তিমিত থাকার পর এ বছরই হাইকোর্টে শুনানির জন্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলাটি।  উচ্চ আদালতেও মামলা জট এবং ডেথ রেফারেন্সের মামলাগুলো বছরভিত্তিক শুনানির মাধ্যমে সুরাহা হওয়ার নীতি অনুসরণ করায় এ আলোচিত মামলাটি নিম্ন আদালতের রায়ের পর টানা পাঁচ বছর কার্যতালিকায় ওঠার জন্য অপেক্ষমাণ আছে। যদিও এর মধ্যে মামলাটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে পর্যায়ক্রমে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। তবে একবার রাষ্ট্রপক্ষের সময় চাওয়া এবং আরেকবার দীর্ঘ কার্যতালিকার নিচের দিকে থাকায় বিচারকরা মামলাটি  শুনতে পারেননি। বর্তমানে মামলাটি বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য  রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ‘ফৌজদারি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য এবং আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রথমে হাইকার্টে আসে। এরপর আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলার যাবতীয় নথি সংযুক্ত করে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। ওই পেপারবুকের প্রস্তুতি শেষেই নিয়ম অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু ডেথ রেফারেন্সের জন্য নির্ধারিত হাইকোর্ট বেঞ্চগুলোতে মূলত বছরের পর বছর ভিত্তিতে মামলা পরিচালনা করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চগুলো ইতোমধ্যে ২০১১ ও ২০১২ সালের মামলার শুনানি শেষ করেছেন। এখন ২০১৩ সালের ডেথ রেফারেন্সের মামলাগুলোর শুনানিও প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।  খুব শীঘ্রই উচ্চ আদালতের এসব বেঞ্চ ২০১৪ সালের মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য শুনানি করবেন। ২০১৪ সালে বিচারিক আদালতে রায় হওয়া রমনা বটমূলের বোমা হামলা মামলাটিও এভাবেই শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় উঠে আসবে।
রাজধানীর রমনার বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালিয়েছিল ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল। এ ঘটনায় নিহত হন দশ জন আর অনেকেই আহত হন। এরপর একই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে বিস্ফোরক আইনের মামলা বিচারিক আদালতে চলমান থেকে যায়। আর হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন রায় দেন।
বিচারিক আদালতের ওই রায়ে মুফতি আব্দুল হান্নান (অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), মওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন ও মাওলানা মো. তাজউদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দেওয়া হয়। পাশাপাশি মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েলকে যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত।

নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যু কার্যকরে অনুমোদন বিষয়ক ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির জন্য ২০১৪ সালে হাইকোর্টে আসে। এরপর প্রধান বিচারপতির বিশেষ নির্দেশনায় ২০১৫ সালের মধ্যে মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে যায়।
মামলাটি শুনানির জন্য প্রথমে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করা হয়। এরপর যথারীতি শুনানি শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা অসমাপ্ত থেকে যায়। তখন মামলা সম্পর্কিত কিছু অসমাপ্ত বক্তব্য প্রদানে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ছয় সপ্তাহ সময় নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তবে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চটিতে মামলার শুনানি অসমাপ্তই থেকে যায়।
পরে মামলাটি বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব কুমার চক্রবর্তীর বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। কিন্তু কয়েক দফায় কার্যতালিকায় উঠে এলেও অন্যান্য মামলাজটের কারণে এ মামলাটির শুনানি আর হয়নি।
তবে মামলাটি শুনানির জন্য আবারও তৃতীয় আরেকটি হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান জানান, বর্তমানে মামলাটি বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য রয়েছে।
মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে কথা হয় সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুজ্জামান রুবেলের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘মামলাটি সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ২৪ নম্বরে ছিল। কিন্তু অন্যান্য মামলার দীর্ঘ শুনানি থাকায় ওই মামলার আর শুনানি করা সম্ভব হয়নি।’ 
মামলাটি শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলেও জানিয়েছেন মো. মনিরুজ্জামান। একইসঙ্গে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শীঘ্রই মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *