মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি (১৮) হত্যা মামলা ও গ্রেফতার আসামিদের বুঝে পেয়েছে ফেনী জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে নুসরাতের নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ধারায় কোনও সংযোজন-বিয়োজন দরকার হবে না বলে জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।
বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মামলা ও কেস ডকেট বুঝে পেয়েছি। এরইমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিবিআই সদস্যরা রয়েছেন।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪ (১) ধারায় নুসরাতের বড়ভাইয়ের দায়ের করা মামলাটিতে নতুন কোনও ধারা সংযোজনের দরকার নেই বলে জানিয়েছে পিবিআই।
ফেনী জেলা পিবিআই’র অতিরিক্ত এসএস মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এজাহারে নতুন করে কোনও ধারা সংযুক্ত করতে হবে না। কারণ, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৪ (১) ধারায় সব বলা আছে। ভিকটিমের মৃত্যু হলে কী হবে, তা এই একই ধারায় বলা হয়েছে।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৪ (১) এ বলা আছে— ‘যদি কোনও ব্যক্তি দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে কোনও শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটান বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন, তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন, এবং এর অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব একলাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।’
মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের তিনটি টিম পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছে। আমরা কেস ডকেট বুঝে পেয়েছি।’
গ্রেফতার আসামিদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা এর আগে তাকে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে কৌশলে একটি বহুতল ভবনে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গত ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১০।
আসামিদের মধ্যে পলাতক রয়েছে— সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলম, অধ্যক্ষ সিরাজউদৌলার অন্যতম সহযোগী নূরউদ্দিন, ওই মাদ্রাসার ছাত্র সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হাসান ও আব্দুল কাদের।
পিবিআই জানিয়েছে, এই মামলায় থানা পুলিশের গ্রেফতার করা অধ্যক্ষ সিরাজউদৌলাকে সাতদিনের ও ওই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার এবং নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল, নুর, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও শাহিদুল ইসলাম পাঁচদিন করে রিমান্ড রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এছাড়া, অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বোনের মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ও জোবায়ের আহম্মেদকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চাইলে আদালত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) শুনানির জন্য দিন ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠান।
ফেনী পিবিআইর পরিদর্শক মো. মোনায়েম মিয়া বলেন, ‘পিবিআই এখনও কাউকে এই মামলায় গ্রেফতার করেনি। তবে শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে।’
এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তে শেষে নিহত নুসরাত জাহানের মরদেহ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ফেনীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন নুসরাত।
বার্তা বিভাগ প্রধান