Home » সাইফুর হত্যা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এল

সাইফুর হত্যা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এল

সিলেট মদন মোহন কলেজের প্রভাষক সাইফুর ও ছাত্রী রুপার মধ্যে ছিল প্রেমের সর্ম্পক। সেই সুবাদে কলেজ শিক্ষক সাইফুর তার প্রেমিকাকে নিয়ে সিলেট নগরীর মেহেরপুর আবাসিক হোটেলে উঠে। সেখানে সাইফুরকে তারই ছাত্রী হত্যা করে বলে রুপা ও তার নতুন প্রেমিক মোজাম্মিল আদালতের কাছে সাড়ে তিনঘন্টা ব্যাপি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

সোমবার সিলেট মেট্রোপলিটন ৩য় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের কাছে নিশাত তাসনিম রুপা স্বীকারোক্তিতে জানায়, তাদের বাড়িতে কয়েক মাস পূর্বে লজিং মাস্টার হিসাবে উঠেন মদন মোহন কলেজের প্রভাষক সাইফুর রহমান। সেখানে উঠার পর রুপাকে প্রথমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে তা ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখেন সাইফুর। পরবর্তীতে সেই ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে সাইফুর তার ছাত্রীকে প্রায়ই ধর্ষণ করতেন। রুপা মদন মোহন কলেজের ছাত্রী। সে সুবাদে রুপা কলেজে গিয়ে পরিচিত হয় অনেক ছেলে বন্ধুর সাথে এক পর্যায়ে মোজাম্মিলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় রুপার। সেই প্রেমের সস্পর্ক ও বন্ধুদের সাথে চলাফেরা দেখে এবং রুপাকে প্রতিনিয়তই কলেজে উত্যক্ত করতেন প্রভাষক সাইফুর। আর বলতেন তার কাছে যে ভিডিও রয়েছে তা তিনি ভাইরাল করে দিবেন। এ নিয়ে রুপা তার প্রেমিকের সাথে পরামর্শ করে। পরামর্শ অনুযায়ি কাজ শুরু করে রুপা। পরবর্তীতে সাইফুর রুপাকে নিয়ে হোটেলে উঠার কথা বলেন। রুপা তাতে রাজি হয়।

আর দুজনেই মিলে স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সিলেট নগরীর সোবহানীঘাটের আবাসিক হোটেল মেহেরপুরে উঠে রুম ভাড়া নেয়। সেখানে রুপা খাবারের সাথে সাইফুরকে ইদুরের বিষ পান করায়। সাইফুর অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে প্লান মোতাবেক রুপার সাথে থাকা রশি দিয়ে হোটেলের কক্ষে সাইফুরকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে তার প্রেমিক মোজাম্মিলকে ফোন করে সিএনজি নিয়ে আসার কথা বলে। মোজাম্মিল সিএনজি নিয়ে এলে দুজন মিলে সাইফুরের লাশ দক্ষিণ সুরমার লতিপুরে ফেলে দেয়। তাছাড়া রুপা ও তার প্রেমিক আদালতের কাছে বলে তারা ভুল করেছে। এর জন্য ক্ষমা প্রার্থী।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানায়, গত শনিবার সকাল দশটায় দক্ষিণ সুরমা থানাধীন সুনামগঞ্জ বাইপাস রোডে লতিপুর নামক স্থানে একটি অজ্ঞাত পুরুষ বয়স অনুমান (৩০) বছর এর মৃতদেহ পাওয়া যায়। তাৎক্ষনিক মৃত দেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে জানা যায় মৃতদেহটি এমসি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে মদন মোহন কলেজ এবং তোয়াকুল কলেজের খন্ডকালীন শিক্ষক সাইফুর রহমানের। তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার ফুলতৈল ছগাম গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে তার আত্মীয়-স্বজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

পরবর্তীতে মৃত সাইফুর রহমানে মা রনিফা খাতুন বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় (মামলা নম্বর ০১(০৪)১৯ ইং) দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য এসআই শিপলু চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। নিহতের বিষয়ে বিস্তারিত অবগত হওয়ার পর তাকে কে বা কারা হত্যা করতে পারে সেই সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য পুলিশ মৃতের আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে সম্ভাব্য খুনিদের শনাক্ত করা হয়। তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান সনাক্ত করার পর সিলেটের শাহপরাণ (রহ.) থানার সুরমা গেইট খিদিরপুর দত্তগ্রামের মো. শফিকুর রহমানের মেয়ে নিশাত তাসনিম রুপা (১৯) ও তার প্রেমিক সুনামগঞ্জের ছাতক থানার আলমপুর গ্রামের নজির আলীর ছেলে মুজাম্মিল হোসেন (২৩) কে যথাক্রমে দত্তগ্রাম ক্ষিদিরপুর ও টিলাগড় এলাকা থেকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নিশাত তাসনিম রুপার সাথে তার মতের বিরুদ্ধে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা, বিভিন্ন সময়ে শারীরিক সম্পর্কের সময় ধারণকৃত ভিডিও, স্থির ছবি, মিথ্যে কাবিননামা প্রকাশসহ তার পরিবারের সদস্যদের হুমকী প্রদানের কারণে সে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে গত শুক্রবার সকাল অনুমান সাড়ে ৮ টায় সময় এম. সি কলেজ, সিলেট ক্যাম্পাসে সাইফুর রহমানের সাথে দেখা করে এবং তাকে বিশ ও ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত সেমাই খেতে দেয়। সেমাই খাওয়ার পর সাইফুর রহমান নিশাত তাসনিম রুপাকে নিয়ে সিলেট সোবহানীঘাটস্থ হোটেল মেহেরপুরে নিয়ে যায় এবং ঐ হোটেলের ২০৬ নং কক্ষে উঠে। কক্ষে উঠার কিছুক্ষণ পর ভিকটিম সাইফুর কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়লে নিশাত তাসনিম রুপা তার সাথে থাকা রশি দিয়ে ভিকটিমের গলায় পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খায়রুল ফজল জানান, মুতদেহ উদ্ধার করেই হত্যাকান্ডের ক্লু উধঘাটনে নামে পুলিশ। অভিযানে দুজনকে আটক করা হয়। আটকের পর দুজনই হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *