মদন মোহন কলেজের শিক্ষক সাইফুর রহমান হত্যার দায় স্কীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁর ছাত্রী নিশাত তাসনীম রুপা। জবানবন্দিতে রুপা দাবি করেন, তাঁর মতের বিরুদ্ধে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন সাইফুর। বিভিন্ন সময়ে শারীরিক সম্পর্কের সময় ধারনকৃত ভিডিও, স্থিরচিত্র ও মিথ্যে কাবিননামার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে দেন সাইফুর। এছাড়া তার পরিবারের সদস্যদের সাইফুর হুমকী প্রদান করতেন বলে দাবি করেন রুপা। এতেই প্রতিশোধ পরায়ণ তিনি সাইফুরকে হত্যা করেন বলে আদালতকে জানান।সোমবার দুপুরে সিলেট মহানগর ৩য় আদালতের হাকিম সাইফুর রহমানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নিশাত তাসনিম রুপা। একই আদালতে জবানবন্দি দেন রুপার কথিত প্রেমিক মোজাম্মিল হোসেনও।
রোববার সকালে দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই এলাকায় সড়কের পাশ থেকে মদন মোহন কলেজের শিক্ষক সাইফুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।পুলিশ জানায়, নগরীর শাহপরান এলাকার খিদিরপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের বাসায় লজিং শিক্ষক হিসেবে থাকতেন সিলেট মদন মোহন কলেজের প্রভাষক মো. সাইফুর রহমান (২৯)। শফিকুর রহমানের মেয়ে নিশাত তাসনীম রুপা (২০) কে পড়াতেন তিনি। প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রুপা ও তাঁর প্রেমিক মোজাম্মিল হোসেন (২৪) পরিকল্পনা করে সাইফুরকে হত্যা করে বলে জানায় পুলিশ।
রুপা আদালতকে বলেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে তিনি সাইফুরের সাথে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা করেন এবং তাকে বিশ ও ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত সেমাই খেতে দেন। সেমাই খাওয়ার পর সাইফুর রহমানকে নিয়ে রুপা হোটেল মেহেরপুরের ২০৬ নং কক্ষে উঠেন। কক্ষে উঠার কিছুক্ষণ পর সাইফুর কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়লে নিশাত তাসনিম রুপা তাহার সাথে থাকা রশি দিয়ে গলায় পেচিয়ে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।সাইফুর হত্যার ঘটনায় রোববার রাতেই নগরীর টিলাগড় থেকে ছাতক উপজেলার আলমপুর গ্রামের মোজাম্মিল হোসেন (২৪) এবং খিদিরপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে নিশাত তাসনীম রুপা (২০) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় সোমবার (১ এপ্রিল) নিহতের মা রনিফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তবে সাইফুররের ঘনিষ্টদের সূত্র দাবি করেছে, শিক্ষক সাইফুর রহমানের সাথে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে প্রেম চলছে রুপার। রূপাও ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী। সম্প্রতি মোজাম্মিলের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন রুপা। এতে বাঁধা দেন সাইফুর। এতে ক্ষুব্দ হয়ে তাকে হত্যা করা হয়।দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল, সাইফুরের লাশ উদ্ধারের পরই তদন্তে নামে পুলিশ। এতে প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি উঠে আসে। এই সূত্র ধরে মোজাম্মিল ও রুপাকে গ্রেপ্তার করা হয়।সোমবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে হত্যার দায় স্বীকার করে তারা ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। প্রেমসংক্রান্ত বিরোধের কারণেই সাইফুরকে হত্যা করা হয় কলেও জবনবন্দিতে জানায় তারা।
প্রসঙ্গত, মদন মোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক সাইফুর রহমান গোয়াইনঘাট উপজেলার ফলতইল সগাম গ্রামের মো. ইউসুব আলীর ছেলে। গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে মেস থেকে বের হন সাইফুর রহমান। রাতে তিনি আর বাসায় ফিরেননি। রবিবার সকালে দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই এলাকায় তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় লোকজন।
প্রতিনিধি