মালিহার চিন্তা:
ছোট্ট মালিহা কেবল স্কুল, কলেজ, ক্লাস শব্দগুলো লিখতে এবং পড়তে শিখেছে। সাথে বিভিন্ন দেশের নামও টুকটাক জানে। গত কদিন ধরে সে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত। কোনভাবেই সমাধান করতে পারছেনা! তার জানামতে এগুলোকে এভাবে ব্যবহার করা অন্যায়! কেন জেনেশুনেও সবাই এগুলাতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে?
মালিহার বড় বোন ফারিহা ভার্সিটিতে পড়ে! পড়াশোনার বাইরে ফেসবুকেই দিন কাটে। মালিহা ফেসবুক নামক বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত! সে তার বোনের কাছ ফেসবুক বিষয়ক ইন্টার্ভিউ নিয়ে রেখেছে, ফেসবুক কী? কারা চালায়, কেন চালায়? কী দেখে?, কেন দেখে? প্রথম দিকে ফারিহা আগ্রহ দেখালেও তার এমন প্রশ্নে এখন বিরক্ত!
গতকাল একটা কাণ্ড ঘটেছে! পুটুং পুটুং করে ফারিহার মোবাইল শব্দ করা শুরু করল; এমন শব্দ সে প্রথম শুনল! এটাকে চ্যাট নটিফিকেশন বলে। ফেসবুকের বন্ধুদের সাথে চ্যাট করা যায় এই পুটুং পুটুং ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ দিয়ে! কিন্ত সেটা বড় কথা নয়। ও যখন বোনের মোবাইল দিয়ে গেম খেলছিল, তখন পুটুং করে একটা ম্যাসেজ আসল, Dangar boy থেকে acpputa freand repusta? লিখা! সে তখন ফারিহাকে মোবাইলটা দিতে দিতে বলল, “আপু তোমাকে একটা বিদেশি ছেলে ম্যাসেজ দিয়েছে!”
-“বিদেশি ছেলে! কই দেখি?” অবাক হয়ে ফারিহা মোবাইলটা হাতে নিয়ে লেখাটা পড়ার পর “অসহ্য! দাঁড়া তোকে এখনই ব্লক করছি” বলে উঠল। মালিহা ব্লক মানে জানে, কেউ বিরক্ত করলে ওর বোন ব্লক করে দেয়। কিন্তু এই ছেলে তো তেমন কিছু করেনি। মালিহার অভ্যাস মত, সে তার ডাইরিতে এই কান্ড লিখে রাখল, dangar boy- acputta freand repusta। সুযোগ বুঝে সে তার বোনকে এর অর্থ জিজ্ঞাসা করবে।
মাহিলার বড় ভাই আছে, বলাই হয়নি। সে মাঠে ফুটবল খেলার পাশাপাশি ফেসবুক চালায়। কলেজে পড়ে। মালিহা ভাইকে বেশি পছন্দ করে কারণ কলেজ থেকে ফেরার পথে সে প্রতিদিন চকলেট নিয়ে আসে। আবার মোবাইলে বেশিক্ষণ গেম খেলতে দেয় অন্যদিকে ভাইয়ার মোবাইলে পুটুং নাই। তো একদিন একটা কান্ড ঘটে গেল!
মালিহা, কাণ্ড. ভাইয়ার কম্পিউটারে বসে মালিহা ফেসবুকের পেজ থেকে মজার মজার ভিডিও দেখছিল, তখন একজন ম্যাসেজ করেছে,
”ফ্রান্স কইরে? তারাতারি মাঠে আয়া প্র। sai kela hoba agka” কিন্ত এখানেও সে কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারল না।
এটাও সে লিখে রাখল, ফ্রান্স কইরে? তারাতারি মাঠে আয়া প্র, sai kela hoba agka. ফেসবুকে এভাবে ভাইয়াকে চ্যাট করতে সে আগেও দেখেছে। কিছুটা অর্থ সে এখন জানে, যেমন ফ্রান্স বললে দেশের নাম বোঝায় না, ফ্রেন্ডকে অনেকে ফ্রান্স বলে, তার মানে বন্ধুকে বোঝায়। উপ্রে, মাইরাল্চে, প্র এসবের মানে উপরে, মেরে ফেলেছে, পরে। ফেসবুক থেকে সে প্রতিদিন নতুন বানান শিখছে আর তার ডাইরির পাতা ওসবে ভরে উঠছে। কিন্তু তার মন খারাপ। কেন?
মালিহার বাবাও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গুরুত্বপূর্ণ খবর সে বাবাকে পড়ে শোনায়। প্রায় খবরের শিরোনাম থেকে শুরু করে ভেতরের পোস্টগুলার বানান দেখে সে মন খারাপ করে বসে। বেশি ভুল ছাত্র বানানে সেখানে ছাএ লিখা।
মালিহা দিন বড় বড় হচ্ছে আর তার চিন্তা বাড়ছে। স্কুলে শেখা শব্দের সাথে সে কোন মিল করতে পারছে না যা তার ভাই বোন এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবীরা লিখে লিখে অভ্যস্ত । মালিহা বানান জানে school, college, class,k alke, কিন্তু ফারিহার পুটুং পুটুং এ cls, klk, cng এসব লেখা দেখে সে অর্থ বের করতে পারেনা। তার খারাপ লাগা শুরু হয়। ইচ্ছে করে ফেসবুকে লিখে দিতে “আপনারা আবার স্কুলে ভর্তি হোন। শব্দটা আবার ঠিক করে শিখুন তারপর লিখুন। আমি স্কুলে যেসব বানান শিখছি ফেসবুকে, ইন্টারনেটে তো কেউ এই বানানে লিখছে না। শুধু লিখে দিলেই কি সেটা পড়ার যোগ্য হয়ে গেল?” কিন্তু কিন্তু পরেই ভাবে আরে আমি এত্ত বোকা! সবাই তো স্কুল,কলেজ, ভার্সিটির পড়া পাশ করে তবেই না ফেসবুক চালায়। আমি মাত্র স্কুলে পড়ি। আমার চেয়ে এসব সাধারণ বানান তো তারাই ভালো করে জানেন। তারপরও এত ভুল কেন? আমাকেই সাহস করে কিছু একটা করতে হবে এই চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
মালিহা এখন O level এর পড়ে। অনেক বড় হয়েছে সে। বড় বোনের বন্ধু তালিকার একটা ফেসবুক আইডির নাম দেখে ডিকশনারি খুঁজে শব্দগুলা দেখে নেয়। তারপর চিন্তা করে, আজই তার বোনকে ওই “বান্ধবীর নাম Angle margina পালটিয়ে Angel morzina করে দেবার জন্য অনুরোধ” করবে তার সাথে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে নিজেই ” ফেসবুকের সব এংগেলদের এঞ্জেল হবার অনুরোধ” জানাবে।
এই চিন্তাটাকে ডাইরিতে মোটা লাল দাগে লিখে নিয়ে
ভার্সিটি শেষ করে ফারিহার ঘরে ফেরার প্রতিক্ষায় থাকে সে….
লেখা: জেনন জিহান
(#বাশু _বানান শুদ্ধকারী)