চলতি পঞ্চম উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপে পাঁচ বিভাগের ২২ জেলার ১০৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি জেলার সদর উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ ধাপে ১২২টি উপজেলার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এ ধাপে ১৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান—তিন পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফলে ওই ১৫টি উপজেলার ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
এ ছাড়া আদালতের আদেশ প্রতিপালনের জন্য চারটি ও অবৈধ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে দুটি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আর তৃতীয় ধাপ থেকে স্থানান্তর করা ছয়টি উপজেলা এ ধাপে যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে ভোট হতে যাচ্ছে ১০৭ উপজেলায়। এসব উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৪টিতে একক প্রার্থী থাকায় ভোট হচ্ছে না।এদিকে, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে এ ধাপেও ক্ষমতাসীন দলের আটজন সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে তিন ধাপের নির্বাচনে মোট ২০ জন সংসদ সদস্যকে একই নির্দেশনা দিয়েছিল ইসি। এ ছাড়া সংসদ সদস্যরা যাতে উপজেলা নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গ না করেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্পিকারকেও চিঠি দিয়েছিল তারা।
ইসি সচিবালয় আরো জানায়, বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে এ ধাপে ৪৮ উপজেলায় ১১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া রিজার্ভ রাখা হয়েছে ৪৮ প্লাটুন। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসেবে একটি রিজার্ভসহ র্যাবের পাঁচটি টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
যে ১৫ উপজেলায় সব পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত
ভোলা জেলার সদর, মনপুরা ও চরফ্যাসন, যশোরের শার্শা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, ঢাকার সাভার ও কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লার লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, দেবীদ্বার ও চৌদ্দগ্রাম, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও ফেনীর পরশুরাম।
৮৮প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৮৮ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ প্রার্থী রয়েছেন।
স্থগিত ছয় উপজেলা
আদালতের নির্দেশনা ও নির্বাচন কমিশনের আদেশে খুলনার ডুমুরিয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার বরুড়া, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার, ইউএনও ও তিন ওসি প্রত্যাহার
চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতা রোধে ব্যর্থ হওয়ায় পিরোজপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তিন থানার তিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করেছে ইসি।
ওসি তিনজন হলেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার ওসি এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম, বরগুনার আমতলী থানার ওসি আলাউদ্দিন মিলন ও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি মো. শাজাহান কবির।
আট সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ
আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে আট সংসদ সদস্যকে (এমপি) নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তাঁরা হলেন টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান, টাঙ্গাইল-৫ আসনের মো. ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৮ আসনের মো. জোয়াহেরুল ইসলাম, বাগেরহাট-৪ আসনের মো. মোজাম্মেল হোসেন, খুলনার-৬ আসনের মো. আক্তারুজ্জামান, ময়মনসিংহ-১১ আসনের কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, যশোর-২ আসনের মো. নাসির উদ্দিন ও ময়মনসিংহ-৯ আসনের আনোয়ার আবেদীন খান।
যে ছয় উপজেলায় ইভিএম
পটুয়াখালী সদর, বাগেরহাট সদর, ময়মনসিংহ সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, ফেনী সদর ও কক্সবাজার সদর। এর মধ্যে ফেনী সদরে শুধু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। আর ময়মনসিংহ সদরে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে।
আরো যে ১০১ উপজেলায় ভোট
সাধারণ ব্যালট পেপারে আরো যে ১০১ উপজেলায় আজ ভোট সেগুলো হচ্ছে—পটুয়াখালীর দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, দুমকী ও বাউফল; ভোলার দৌলতখান, তজুমদ্দিন ও লালমোহন; বরগুনার সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা ও পাথরঘাটা; পিরোজপুরের সদর, ইন্দুরকানী, কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া, নেছারাবাদ ও নাজিরপুর; যশোরের সদর, বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর; খুলনার দীঘলিয়া, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, রূপসা, তেরখাদা, ফুলতলা ও বাটিয়াঘাটা; বাগেরহাটের মোংলা, মোরেলগঞ্জ, চিতলমারী, কচুয়া, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও শরণখোলা; ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, ফুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ফুলবাড়ীয়া, গৌরীপুর, নান্দাইল, মুক্তাগাছা ও ভালুকা; নরসিংদী সদর; মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, লৌহজং, শ্রীনগর, টঙ্গিবাড়ী ও গজারিয়া; নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, সোনারগাঁও ও রূপগঞ্জ; ঢাকার ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ; টাঙ্গাইলের সদর, ধনবাড়ী, মধুপুর, মির্জাপুর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, ঘাটাইল, ভূঞাপুর, কালিহাতী, গোপালপুর, বাসাইল ও সখিপুর; কুমিল্লার তিতাস, চান্দিনা, মুরাদনগর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মেঘনা, ও হোমনা; নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, সুবর্ণচর ও চাটখিল; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর, সরাইল, আখাউড়া, আশুগঞ্জ, নাসিরনগর ও নবীনগর; ফেনীর ফুলগাজী, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা; দিনাজপুরের সদর; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ; কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া।
যে ৩৯ উপজেলায় বিনা ভোটে চেয়ারম্যান
যে ৩৯ উপজেলায় বিনা ভোটে চেয়ারম্যান সেগুলো হচ্ছে—আগে উল্লিখিত সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ১৫টি উপজেলা ছাড়াও ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া, যশোর সদর, খুলনার ফুলতলা ও বাটিয়াঘাটা, বাগেরহাটের সদর, মোংলা, চিতলমারী, কচুয়া, রামপাল ও শরণখোলা, ময়মনসিংহের সদর ও ফুলবাড়ীয়া, ঢাকার দোহার, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, নোয়াখালীর সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও সুবর্ণচর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, ফেনীর ফুলগাজী, সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া এবং দিনাজপুর সদর।আজকের এ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা চেয়ারম্যান পদে ৩৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩৩ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪০৬ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা নয় হাজার ৭৪০টি। ভোটার দুই কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ৭০৪ জন।
প্রতিনিধি