ঘর কিংবা সড়কের ফুটপাতে বসানো ফ্লোর টাইলসের ওপর দিয়ে হাঁটবে মানুষ। এই হাঁটা থেকেই উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে জ্বালানো যাবে লাইট, চালানো যাবে ফ্যান। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এমন অভিনব প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২ এর একটি দল। উদ্ভাবনের নাম দেয়া হয়েছে ‘ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেটিং ফ্লোর টাইলস’ (বিদ্যুৎ উৎপন্নকারী ফ্লোর টাইলস)।
এই উদ্ভাবনী প্রজেক্টের প্রধান গবেষক ছিলেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. এএসএম ইফতেখার উদ্দিন। গবেষণা সহকারী হিসেবে ছিলেন মো. রাজু মিয়া, সাথে ছিলেন ইইই বিভাগের ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রমা পাল, ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সজল কান্তি সিনহা, ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস লিলি ও ৪১তম ব্যাচের সুমাইয়া জান্নাত চৌধুরী।
‘ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেটিং ফ্লোর টাইলস’ প্রজেক্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শিব প্রসাদ সেন, শাবির সিএসসি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রজেক্টের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এএসএম ইফতেখার উদ্দিন জানান, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে অব্যবহৃত শক্তিকে কিভাবে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা যায়, সে চিন্তা থেকেই ‘ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেটিং ফ্লোর টাইলস’ প্রজেক্টটি শুরু করেন তারা। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২ এ ছয় মাস ধরে কাজ করে এই উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে তার দল।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে বিশেষ ধরনের ফ্লোর টাইলস উদ্ভাবন করেছি, এগুলো ঘরে কিংবা সড়কে ফুটপাতে বসানো যাবে। এই টাইলসে আমরা চুম্বকীয় আবেশ ব্যবহার করেছি। সাথে আছে বিশেষ ধরনের ব্যাটারি। কেউ যখন টাইলসের ওপর দিয়ে হাঁটবে, তখন তার পায়ের চাপে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। সে বিদ্যুৎ জমা হবে ব্যাটারিতে।’
ড. ইফতেখার বিশদ বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘আমরা চার ফুট বাই তিন ফুট আকারের বিদ্যুৎ উৎপন্নকারী ফ্লোর টাইলস উদ্ভাবন করেছি। এই টাইলসে ৮ বার পায়ের চাপ পড়লে দুই দশমিক চার ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এক ঘন্টায় টাইলসের ওপর ১২শ বার পায়ের চাপ পড়লে ৪০ ওয়াটের একটি এলইডি বাল্ব সাড়ে ৫ ঘন্টা জ্বালানো যাবে। চাইলে ফ্যান চালানো কিংবা অন্য কোনো কাজেও উৎপন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব।’
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমানে ‘ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেটিং ফ্লোর টাইলস’ প্রজেক্টটি আরো উন্নত করার কাজ করছে উদ্ভাবনকারী দলটি। বাংলাদেশ সরকার চাইলে এই প্রজেক্ট নিয়ে তাদের সাথেও কাজ করতে প্রস্তুত দলটি।
প্রসঙ্গত, ড. ইফেতখার উদ্দিন এর ‘ভাইব্রেশন ড্রিভেন ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক এনার্জি হার্ভেস্টার’ শীর্ষক আরেকটি উদ্ভাবনী প্রকল্প গত ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ ‘এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)’ এর প্রতিযোগিতা ‘ইনোভ-এ-থোন ২০১৮’ এর মূলপর্বে নির্বাচিত হয়। ওই প্রকল্পটি সরকারি অনুদানে আরো উন্নত করতে কাজ করবেন তিনি।
প্রতিনিধি