রাজধানীর কাঁচাবাজারে যেন চৈত্রের উত্তাপ। মাছ, মাংস ও ডিমের দাম চড়া। ভালো কোনো সবজি কিনতে গেলেই কেজি পড়ছে ৬০ টাকা। সব মিলিয়ে চাপে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষেরা। কাঁচাবাজারে তাঁদের ব্যয় বেশ বেড়ে গেছে।বাজারের সবজি ও মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের পর গ্রীষ্মের শুরুতে সবজি ও মাছের দাম একটু বেশি থাকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মুরগি, গরুর মাংস ও ডিমের বাড়তি দাম। এ সময়ে মাংস ও ডিমের দাম সাধারণত এত চড়া থাকে না।বছরের এ সময়টা সাধারণত ব্রয়লার মুরগির কেজিপ্রতি দর ১৩০-১৪০ টাকার মধ্যে থাকে। মাস দুয়েক আগে এ দরই ছিল। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা কেজিতে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম এখন ২০ শতাংশ বেশি। কক মুরগির কেজি এখন ২৮০-২৯০ টাকা, যা স্বাভাবিক দামের চেয়ে ৫০ টাকার মতো বাড়তি। দেশি মুরগির কেজি হাঁকা হচ্ছে ৪৫০-৪৬০ টাকা, যা সাধারণত ৪০০ টাকার কাছাকাছি দরে পাওয়া যেত।
মুরগির সঙ্গে বেড়েছে গরুর মাংসের দামও। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন, যা এর আগে ৫০০ টাকা ছিল। অন্যান্য বাজারেও এখন ৫৫০ টাকার নিচে গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে না।মাংসের বদলে মাছ কিনতে যাবেন? আগের চেয়ে মাছের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। বাজারের সবচেয়ে সস্তা মাছগুলোর একটি চাষ করা পাঙাশ। এখন মাছটির দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকা। আকারে বড় হলে ১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আবদুল জলিল বলেন, মাসখানেক ধরে মাছের বাজার চড়া। এর আগে তিনি প্রতি কেজি পাঙাশ ১২০ টাকা দরে বিক্রি করতেন। তিনি বলেন, শুধু পাঙাশ নয়, সব মাছের দামই এখন বেশি। এখন খাল-বিল শুকনা। খামারে নতুন পোনা ছাড়া হচ্ছে। ফলে মাছের সরবরাহ কম।
মাছ-মাংস বাদ দিয়ে ডিম কিনতে গেলে দাম ডজনপ্রতি ১৫-২০ টাকা বেশি দিতে হবে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম এখন ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিমের ডজন ১৫০ টাকা। আর দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৮০ টাকা।বাজারে বেশির ভাগ সবজির প্রতি কেজির দর এখন ৫০ থেকে ৭০ টাকা। নতুন সবজি ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও ঢ্যাঁড়স এবং করলা, বরবটি ও শজনে প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। পটোল, লতি, কুমড়া, বেগুন ইত্যাদি সবজির প্রতি কেজি দর ৪০-৫০ টাকা। কাঁচামরিচের দর প্রতি কেজি ৬০-৮০ টাকা দরে। সস্তার মধ্যে রয়েছে আলু, প্রতি কেজি ১৫ টাকা। পেঁয়াজের দরও স্বস্তির মধ্যে, প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা। চীনা রসুনের দর কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১১০-১২০ টাকা হলেও দেশি রসুনের দাম মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা।সব মিলিয়ে বাজারের অবস্থা জানতে চাইলে ঢাকার কাঁঠালবাগান এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, ‘আপনাকে মাংস না কিনলে মাছ কিনতে হবে। অন্তত সবজি প্রতিদিন লাগেই। সবকিছুর দামই এখন বেশি।’ তিনি বলেন, অন্য সব জায়গায় খরচ বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষ কাঁচাবাজারে ব্যয় কমিয়ে সামাল দেয়। কাঁচাবাজারে ব্যয় বাড়লে কোথায় খরচ কমাবে?