শাহীন মাহমুদ রাসেল :কক্সবাজার সদরের বহুল বিতর্কিত খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্তরের সরকারি বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। রাতের আঁধারে এসব বই বিক্রি করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। বই বিক্রির টাকার গড়মিল হওয়ায় নুরুল হক নামের একজন দপ্তরিকে সাময়িকভাবে অব্যাহতিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা।
সরেজমিনে ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রবিবার (১৭ মার্চ) রাতে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পিয়ন সিরাজ, দপ্তরি নুরুল হক ও নুরুল হক (মিঠাছড়ি) ২০১৮ ও ২০১৯ সালের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক রামু বাইপাস এলাকার কাগজ ব্যবসায়ী নুরুল কবিরের কাছে কেজি দরে বিক্রি করেন। নুরুল কবির পরদিন বিকেলে প্রায় দুই হাজার কেজি ওজনের বিভিন্ন শ্রেণির ওই পাঠ্যপুস্তক পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা চট্টগ্রামের পুরাতন কাগজ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে রামু এলাকার স্থানীয় কাগজ ক্রেতা নুরুল কবির বই কেনার কথা স্বীকার করে জানান, সাড়ে ১২ টাকা কেজিতে বইগুলো ক্রয় করেছেন তিনি। সে অনুযায়ী রাতের অন্ধকারে স্কুল কতৃপক্ষের লোকজন তার কাছ থেকে নিয়েছেন ২৩ হাজার ৫০০ টাকা। তবে বিনামূল্যে সরকারি বই বিক্রি করার কোনো এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক’রা বইগুলো বিক্রি করেন।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা জানায়, বই বিক্রির খবর পেয়ে দুপুরে ওই কাগজ ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণির বিনামূল্যের বই দেখতে পান। এর আগের বছরও এই দোকান থেকে বিপুল সংখ্যক বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক উদ্ধার করা হয়েছিল। উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আগামী ১ মাসের মধ্যে সুস্পষ্ট মন্তব্যসহ ম্যানেজিং কমিটির কাছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয় বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার দিন রাতে একটি পিকআপ ভ্যান স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখেছেন এবং পরে ভ্যানটি রামুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বই বিক্রির কথা অস্বীকার করে মুঠোফোনে তিনি বলেন, তার বিদ্যালয়ে এমন কিছুই ঘটেনি, তিনি কিছুই জানেন না। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এনাম বই বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের পুরনো কিছু খাতাপত্র বিক্রি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সালেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এভাবে সরকারি বই বিক্রি করার বিধান নেই। এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, সরকারি নতুন কিংবা পুরাতন বই কোনোটাই বিক্রি করে দেয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ এ কাজ করে থাকে তবে তা তদন্ত করে দেখা হবে এবং দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বলেন, আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কোনদিন স্কুলের হিসাব দেখতে চাইলে দেখায়নি। দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে আসছে প্রধান শিক্ষক জহিরুল ইসলাম ও স্কুল পরিচালনা কমিটির একাংশ। তিনি আরোও বলেন, প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে প্রতিবছর বই বিক্রি করা হয়। অভিভাবকরা জানান, ছেলেমেয়েরা পড়ার বই পায় না, অথচ প্রধান শিক্ষক নতুন বই কেজি দরে বিক্রি করে।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নতুন ক্লাসের নতুন বই সরকারিভাবে দেওয়া হবে। বছরের প্রথম দিনই দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বই উৎসব। এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও থাকে উৎফুল্ল। কিন্তু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বা কিছু শিক্ষক বই শিক্ষার্থীদের না দিয়ে বিক্রি করছেন। প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের জন্য সরবরাহ করা বই বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে কিংবা বিক্রিত বই জব্দ করা হয়।
নির্বাহী সম্পাদক