Home » ২০০ মানুষও নিউজিল্যান্ড হামলার লাইভ দেখেনি ফেসবুকের দাবি

২০০ মানুষও নিউজিল্যান্ড হামলার লাইভ দেখেনি ফেসবুকের দাবি

১৫ মার্চ (শুক্রবার) ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামের সন্দেহভাজন হামলাকারীর লক্ষ্যবস্তু হয় নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদ। শহরের হাগলি পার্কমুখী সড়ক ডিনস এভিনিউয়ের আল নুর মসজিদসহ লিনউডের আরেকটি মসজিদে তার তাণ্ডবের বলি হয় অর্ধশত মানুষ। ট্যারান্ট তার হামলাটি ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করে। স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হাতে হামলাকারীর এগিয়ে যাওয়া, মসজিদের প্রবেশকক্ষ থেকে বিভিন্ন কক্ষে নির্বিচারি গুলি বর্ষণ আর রক্তাক্ত নৃশংস পরিস্থিতির ভিডিও মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। হামলার পর পরই ভিডিওটির বিস্তার ঠেকাতে তৎপর হয় নিউ জিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগেই ছড়িয়ে পড়ে তা। সন্ত্রাসী হামলার লাইভ স্ট্রিমিং ভিডিও ঠেকাতে না পারায় প্রশ্নের মুখে পড়ে ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।

সোমবার ফেসবুক দাবি করে, সরাসরি সম্প্রচার শেষ হওয়ার ১২ মিনিটের মাথায় একজন ব্যবহারকারী মূল ভিডিওটির ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করে। আর তার আগে ভিডিওটি দেখতে পেয়েছে ২০০-রও কম মানুষ। ভিডিওটি নিয়ে সতর্ক করার আগেই এক ব্যবহারকারী ওই ভিডিওটির লিংক একটি ফাইল শেয়ারিং সাইটে পোস্ট করে ফেললে তা আরও ছড়িয়ে পড়ে এবং ৪০০০ মানুষ তা দেখতে পায়। পরে ফেসবুক মূল ভিডিও সরিয়ে ফেলে। তবে মূল ভিডিও সরিয়ে ফেলা হলেও টুইটার, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে এর কপিগুলো ছড়িয়ে পড়ে।

তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ভার্জ বলছে, ফেসবুকের নতুন দাবির সঙ্গে রাইট উইং ওয়াচের গবেষক জ্যারেড হল্টের দাবি সাংঘর্ষিক। হল্ট দাবি করেছেন, হামলাকারী যখন হামলার আগেই এইটচ্যান সাইটে ফেসবুক পেজের (লাইভ স্ট্রিম) লিংকটি দিয়েছিল, তখনই তিনি রিপোর্ট করেছিলেন। উল্লেখ্য, হামলার আগে ‘এইট চ্যান’ নামে একটি সাইটে (আইনবহির্ভূত এক ফোরাম যা বর্ণবাদী ও জঙ্গিবাদী পোস্ট শেয়ার করে) ৮৭ পৃষ্টার একটি ইশতেহার প্রকাশ করে হামলাকারী। সেখানে ২০১১ সালে নরওয়ের হামলাকারী অ্যান্ডার্স ব্রেইভিকের মতো উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের কর্মকাণ্ডকে সামনে আনা হয়। অভিবাসনবিরোধী ও মুসলিমবিদ্বেষী বিভিন্ন প্রবণতাকেও গৌরবান্বিত করা হয় কথিত সেই ইশতেহারে। যেখান থেকে মসজিদে হামলার লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়, ‘এইট চ্যান’ নামের ওয়েবসাইটে সেই ফেসবুক পেজের ঠিকানাও দেওয়া হয়েছিল।

এর আগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, হামলার ২৪ ঘণ্টার মাথায় তারা ১৫ লাখ ভিডিও সরাতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ভিডিও আপলোড করার সময়ই ঠেকিয়ে দেওয়া গেছে।

ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে নিউ জিল্যান্ডের কয়েকটি  প্রতিষ্ঠান। ওয়েস্টপ্যাক নিউ জিল্যান্ড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত’ ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেটওয়ার্কে বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ রাখছে তারা। সোমবার লোটো নিউজিল্যান্ড বিবিসিকে জানিয়েছে, আপাতত সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ থাকবে।

বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী শিল্প গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নিজেদের সদস্যদের উদ্দেশে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সদস্যদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, যেসব প্ল্যাটফর্ম শেয়ার হওয়া কন্টেন্টের দায় নেয় না, তাদেরকে তারা সহযোগিতা করবে কিনা। বিবৃতিতে বলা হয়: ‘ক্রাইস্টচার্চের ঘটনায় একটি প্রশ্ন উঠেছে। তাহলো, যদি সাইটের মালিকরা ভোক্তাদেরকে মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যে বিজ্ঞাপন পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারেন, তবে এ ধরনের (সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড) কন্টেন্ট ঠেকাতে কেন একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় না?’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *