Home » ধর্ষণের শিকার কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা, গ্রেপ্তার ২

ধর্ষণের শিকার কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা, গ্রেপ্তার ২

গত বছর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল মেয়েটি (১৪)। কিন্তু সংসারে অভাবের কারণে এক সময় স্কুল ছেড়ে দেয়। দরিদ্র মা-বাবা দিনমজুরি করেন। মা-বাবা কাজে বাইরে থাকার সুযোগে একদিন মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন প্রতিবেশী আব্দুন নূর (৬০)। 

ঘটনা জানাজানির পর গ্রাম্যশালিসে ওই বৃদ্ধকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দেড়মাস পর ওই মেয়েটির সঙ্গে বৃদ্ধের বিয়ের রায় হয়। কিন্তু পরে আর বিয়ে হয়নি। জরিমানার পুরো টাকা পায়নি মেয়েটির পরিবার। এরপর অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে মেয়েটি। নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে মা-বাবা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গণিগঞ্জ গ্রামের ঘটনা এটি। 

এ ঘটনায় পুলিশ রবিবার রাতে ঘটনার মূল হোতাসহ দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে। সোমবার থানায় মামলা করেছেন ওই মেয়ের মা। 

মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে গত রবিবার তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র অনুযায়ী আগামি ৫ এপ্রিল মেয়েটির সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছেন চিকিৎসক।

রোববার রাতে সুনামগঞ্জের একজন সংবাদকর্মী বিষয়টি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ রাতেই ধর্ষক আব্দুন নূর ও তার ভাতিজা কবির আহমদকে (৪৫) আটক করে। সোমবার মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় আব্দুন নূর ও কবির আহমদসহ অজ্ঞাত আর ৭-৮জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। 

অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির মা জানান, তাদের দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে বড় মেয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি এবং তার স্বামী কাজে বাইরে থাকার সুযোগে প্রতিবেশী আব্দুন নূর (৬০) একদিন ঘরে ঢুকে তার মেয়েকে ধর্ষণ করেন। পরে একইভাবে আব্দুন নূর মেয়েটিকে আরও কয়েকদিন ধর্ষণ করেন। ঘটনার চারমাস পর তিনি একদিন মেয়েকে কাঁদতে দেখে কি হয়েছে জানতে চান। পরে মেয়ে সব খুলে বলে। এরপর তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানা যায় সে অন্তঃসত্তা। এরপর তিনি গ্রামের মানুষদের বিষয়টি জানান। গ্রামের লোকজন সালিসে বসে আব্দুন নূরকে ৫০হাজার জরিমানা করেন। 

স্থানীয়রা জানান, ধর্ষণ ঘটনার সালিসে গণিগঞ্জ গ্রামের পূর্ব পাড়ার আব্দুল মজিদ (৬০), পশ্চিম পাড়ার আব্দুল আওয়াল (৫৫), মাওলানা আব্দুল কাইয়ূম (৫২), খইছা মিয়া, বাজার পাড়ার কাহার মিয়া, আনজু মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই দিনই তাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সালিসের রায় অনুযায়ী দেড়মাস পর আরও ৩০হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু দেড় মাস পর তারা আর টাকা পাননি, মেয়ের বিয়েও হয়নি। আজ নয়, কাল করে করে সময় পার করে আব্দুন নূর। সালিসের লোকজনও পরে আর এ নিয়ে কোনো কথা বলেন নি। 

মেয়েটির মা আরও জানান, বিচারের সময় যারা মূল ভুমিকায় ছিলেন তারাও পরে আর কোনো খোঁজ নেননি। এক পর্যায়ে আব্দুন নূরের ভাতিজা কবির আহমদ এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করতে তাদের হুমকি দেয়। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ছেলেমেয়েদের নিয়ে একবেলা খেলে আরেকবেলা উপাস থাকতে হয়। মেয়ের বাবাও সহজ-সরল। কি করব বুঝতে পারিনি। এখন তো মহা সমস্যায় পড়েছি। এই মেয়েকে নিয়ে কোথাও যাব। মেয়ের বাচ্চার কি হবে।’ 

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রোববার রাতে ঘটনা শুনেই ওই গ্রামে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। ঘটনার মূল হোত আব্দুন নূর ও তার ভাতিজাকে কবির আহমদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছ। যারা মেয়ে ও তার পরিবারকে থানায় আসতে বাঁধা দিয়েছেন, বিচার পঞ্চায়েতে মূল ভূমিকা রেখেছেন তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *