নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ব্রেন্টন টেরেন্ট একাই করেছে। শুক্রবার তার সঙ্গে আরো যে ৩ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, হামলায় তাদের কোনো দৃশ্যত সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায় নি পুলিশ। গতকাল পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ এ কথা জানান। তিনি বলেন, ঘটনার পর অন্য যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, হামলার সঙ্গে তাদের দৃশ্যত কোনো যোগসূত্র নেই বলে মনে হচ্ছে। ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান টেরেন্ট একজন স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী। মাথায় রাখা ক্যামেরা দিয়ে সে মসজিদে হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য ১৭ মিনিট ধরে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করছিল। শনিবার তাকে কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত সাদা শার্ট ও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। এসময় সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসছিল।
তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আরো কয়েকটি অভিযোগ গঠনের প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন জানিয়েছেন, ব্রেন্টন টেরেন্টের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের লাইসেন্স ছিল। তার নিজেরই ৫টি বন্দুক আছে। অতীতে তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই। অস্বাভাবিক বা বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য সে কখনো জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে পড়ে নি।ক্রাইস্টচার্চ হত্যাকাণ্ডে শুধু ব্রেন্টন টেরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ। তিনি বলেন, পুলিশ মনে করে গ্রেপ্তারকৃত বাকি তিন জনের সঙ্গে হামলার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে এখনো তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আরেক জনের বিরুদ্ধেও অস্ত্র আইনে অভিযোগ তোলা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া, গ্রেপ্তার হওয়া আরেক নারীকে অভিযুক্ত না করে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
কোনো আবেদন ছাড়াই টেরেন্ট এখন পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আগামী ৫ই এপ্রিল তাকে আবারো আদালতে তোলা হবে। এর আগে, শনিবার নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ার অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে ছবি ও ভিডিওচিত্রে টেরেন্টের মুখমণ্ডল অস্পষ্ট করে প্রচারের নির্দেশ দেয় আদালত।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা: ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহত ৫০ ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীরা। তারা শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ধারণা করা হচ্ছে, দুই একদিনের মধ্যে নিহতদের মৃতদেহ দাফনের জন্য প্রদান করা হবে। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৩৪ জন। এদের সবাই ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। চার বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে পার্লামেন্ট। তিনি আশা করছেন, বুধবার নাগাদ নিহতদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ফেসবুকে সরাসরি ভিডিও প্রকাশের বিষয়েও কথা বলেন আরডেন। তিনি বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এটা একটি সমস্যা।
অস্ত্র আইন সংস্কার করবে সরকার: ক্রাইস্টচার্চ ট্র্যাজেডির পর দেশের অস্ত্র আইন সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে নিউজিল্যান্ড সরকার। প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন জানান, সোমবার (আজ) মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে অস্ত্র আইন সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি নিশ্চিত করেন যে, অবশ্যই অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আসবে।