সিলেটের ওসমানীনগরে বন্ধুদের হাতে খুন হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান উরফে মছু (১৫)। নিহত মোস্তাফিজুর রহমান উরফে মছুর তিন বন্ধু মো. জীবন, লিমন, শরীফ ১৪ মার্চ রাত ৮টায় মান্দারুকা স্কুলের মাঠে নিয়ে গিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরে, যাতে ডাক চিৎকার না করতে পারে। তিনজনই পাথর দিয়ে মোস্তাফিজুরের নাক, মুখ ও অন্ডকোষসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। পরে তারা একটি লাইলনের রশি মোস্তাফিজুরের গলায় গিট্টু দিলে টান দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। উক্ত ঘটনায় মছুর মা মোছা. রাসনা বেগম ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৯(০৩)২০১৯। মামলাটি তদন্তাধীন আছে।
ওসমানীনগরে বন্ধুদের হাতে মোস্তাফিজুর রহমান উরফে মছু নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন সিলেট জেলা বিশেষ শাখা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহ্বুবুল আলম।
শনিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহ্বুবুল আলম বলেন, স্থানীয় অনুসন্ধানকালে জানা যায় ওসমানীনগর উপজেলার মানান্দারুকা এলাকার মৃত মোস্তাফিজুর রহমান মছু (১৫) ১৪ মার্চ কাজ থেকে বাড়িতে এসে বিকাল সাড়ে ৫ টায় বাহিরে বের হয়। রাত বাড়ার সাথে সাথে মছু বাড়ীতে না আসায় তার মা রাসনা বেগম তার গ্রামের আশপাশ খোঁজাখুঁজি করে ছেলের সন্ধান পাননি। পরে ১৫ মার্চ ভোরের দিকে খোঁজাখুজির একপর্যায়ে গ্রামের ৬নং মান্দারুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকালে ছেলের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। সার্বিক অনুসন্ধানকালে জানা যায় ১৪ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীরা মোস্তাফিজুর রহমান মছুকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে সিলেট জেলার পুলিশ সুপার জনাব মো. মনিরুজ্জামান পিপিএম এর নির্দেশনায় ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এর সার্বিক তত্বাবধানে ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম আল-মামুন এর নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৫ মার্চ সন্দেহের ভিত্তিতে মছুর এক বন্ধুকে আটক করে। সে ওসমানীনগর উপজেলার মান্দারুকা গ্রামের আব্দুর রহিম এর ছেলে মো. জীবন (১৬)। মো. জীবনের স্বীকাক্তিতে অভিযুক্ত অপর দুই বন্ধু হচ্ছে- খুজগীপুর গ্রামের এলাইচ মিয়ার ছেলে লিমন (১৬) ও মান্দারুকা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে শরীফ (১৬)।
পুলিশের কাছে জীবন জানায়, প্রায় একমাস আগে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে একটি মেয়ের মোবাইল ফোন থেকে জীবন এর নাম্বারে কল আসে। তখন থেকেই জীবন, লিমন, শরীফ তিন বন্ধু বিভিন্ন সময় উক্ত অপরিচিত নাম্বারে কথা বলত। কথা বলার ১০/১২ দিন পর বিষয়টি মোস্তাফিজুর জানতে পারে। পরবর্তীতে মোস্তাফিজুর রহমান ঐ অপরিচিত নাম্বারে মেয়েটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। মোস্তাফিজুর সহজ-সরল বিধায় তারা তিন বন্ধু উক্ত অপরিচিত নাম্বারে মেয়েটির সাথে কথা বলতে দেয়নি। এ বিষয় নিয়ে জীবন, লিমন, শরীফ ও মোস্তাফিজুর এর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। মনোমালিন্যের জের ধরে জীবন, লিমন, শরীফ গত ২০/২২ দিন আগে মান্দারুকা স্কুলের উত্তর পাশে ব্রীজের গোড়ায় সন্ধ্যার পরে তিন বন্ধু মিলে মোস্তাফিজকে কিলঘুষি মারে।
১৩ মার্চ বিকালে অপরিচিত নাম্বারের ফোনের ঘটনার বিষয়টি নিয়ে আবার মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে জীবন, লিমন, শরীফের মনোমালিন্য হয়। ঐ দিন সন্ধ্যার সময় জীবন, লিমন, শরীফ তিন জন একত্রিত হয়ে পূর্বের জায়গায় সন্ধ্যার পরে মোস্তাফিজকে মারপিট করে। মোস্তাফিজ তাদের নিকট হতে চলে যাওয়াকালে বলে যে, জীবন, লিমন, শরীফ তিনজনকে সুযোগ মত পেলে মোস্তাফিজুর মারপিট করবে এবং অপরিচিত নাম্বারের ফোনের বিষয়টি জীবনের বড় ভাইকে বলে দিবে। তখন মোস্তাফিজ বাড়ীতে চলে যাওয়ার পরে তারা তিন বন্ধু জীবন, লিমন, শরীফ সিদ্ধান্ত নেয় যে, মোস্তাফিজকে মারপিট করবে।
১৪ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় জীবন মোস্তাফিজকে তার বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে এসে জীবন, লিমন, শরীফ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে। এক পর্যায়ে রাত ৮টায় দিকে তিন বন্ধু মোস্তাফিজকে মান্দারুকা স্কুলের মাঠে নিয়ে গিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরে, যাতে ডাক চিৎকার না করতে পারে। অপরদিকে জীবন, লিমন, শরীফ তিনজনই পাথর দিয়ে মোস্তাফিজুরের নাক, মুখ ও অন্ডকোষসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। জখমে জীবন, লিমন, শরীফদের কাছে ধারণা হয় যে, মোস্তাফিজুর মারা যাবে। এ সময় লিমন একটি লাইলনের রশি এনে মোস্তাফিজুরের গলায় গিট্টু দিলে জীবন ও লিমন তাতে টান দিতে থাকে। পরবর্তীতে জীবন, লিমন, শরীফ তিনজন নিশ্চিত হয় মোস্তাফিজুরের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিনিধি