Home » মিষ্টির নামে পায়খানা নাকি কাগজ কিনবেন?

মিষ্টির নামে পায়খানা নাকি কাগজ কিনবেন?

মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল:
প্রকাশ্যে ওজনে কম দিচ্ছে মিষ্টি বিক্রেতারা। মিষ্টির সাথে খালি প্যাকেটসহ পরিমাপ করে বিক্রি করায় প্যাকেটের সমান ওজনের মিষ্টি কম পাচ্ছেন ক্রেতারা।
প্রথমেই মনে হতে পারে একটি খালি প্যাকেটের আর কতো ওজন হতে পারে! কিন্তু পরিমাপ করে দেখা গেছে একেকটি খালি প্যাকেটের ওজন প্রায় ২০০ গ্রামের মতো। এখন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা প্যাকেটসহ পরিমাপ করে বেশি লাভ করার উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে ক্রমশ ভারী প্যাকেট তৈরি করছে। এতে করে প্রতি কেজি মিষ্টিতে ১০০০ গ্রামের বদলে ক্রেতারা পাচ্ছেন ৮০০ গ্রামের মতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো কম। এটা কী ওজনে কম দেয়া নয়? এটা কী প্রতারণা নয়??
এছাড়া বিভিন্ন দামের মিষ্টি রয়েছে। ধরুন ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দামের মিষ্টি রয়েছে। স্বাধ ও মানের কারণে দামের এই ভিন্নতা হতে পারে। কিন্তু কাগজের খালি প্যাকেট তো সবই একই। একই কাগজ দিয়ে একই কারিগরের হাতে বানানো এবং একই ভাঁজে রাখা। কিন্তু সেই একই রকম প্যাকেটের দামে কেনো এতো ভিন্নতা! কেনো এতো পুকুর চুরি!!
যখন ২০০ টাকা দামের মিষ্টির সাথে একটি খালি প্যাকেট পরিমাপ করে বিক্রি করা হয়, তখন ধরুন ওই খালি প্যাকেটের দাম হয় প্রায় ৪০ টাকা। কিন্তু যখন ৩০০ টাকা দামের মিষ্টির সাথে পরিমাপ করা হয় তখন ওই একই খালী প্যাকেটের দাম হয়ে যায় প্রায় ৬০ টাকা। আর যখন ৪০০ টাকা দামের মিষ্টির সাথে পরিমাপ করা হয় তখন ওই একই খালী প্যাকেটের দাম হয়ে যায় প্রায় ৮০ টাকা। আমার হিসাবে ভুল থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কারণ আমি অংকে কাঁচা। আমার হিসাব যদি ঠিক থাকে, তাহলে বুঝা যাচ্ছে ক্রেতারা ৩ ধরণের মিষ্টি কিনলে, ৩ ধরণের ঠকছেন।
এটা কতোটুকু যুক্তিসংগত! একই রকম খালি প্যাকেটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন টাকা আদায় করা হচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে! আজব ব্যাপার!!
খালি প্যাকেটের ওজনের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে মিষ্টির আসল ওজন। মিষ্টির দামের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে খালি প্যাকেটের আসল দাম। মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযানও দেখা গেছে এসবের বিরুদ্ধে। এমন বাড়তি ওজনের প্যাকেটের কারণে জরিমানা গুনতে হয়েছে কিছু কিছু মিষ্টির দোকানকে। তবে স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি।
কিন্তু এর একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত। ব্যবসায়ীরা লাভ করবে এটাই স্বাভাবিক। লাভ করুক। ইচ্ছামতো লাভ করুক! এখানে প্রতিবাদ করার মতো কেউকে দেখিনা। ৪০০ টাকায় এক কেজি মিষ্টি কিনতে হবে, তা হয়তো কিছুদিন আগেও ক্রেতারা ভাবেননি। হয়তো আরো বেশি দামেও মিষ্টি গেলানো হবে ভবিষ্যতে। ক্রেতারা তখনও টাকা দিয়েই মিষ্টি কিনবেন। দাম বাড়ালে লাভ তো হচ্ছেই। ওজন ঠিক রাখতে অসুবিধা কোথায়? প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে প্যাকেটের কি হবে?? সমস্যা তো প্যাকেটে। আমার মূল কথাটাই খালি প্যাকেট নিয়ে। মিষ্টির মান, দাম বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে আমি বলছিনা। আমার কথা কেবল ওই খালি প্যাকেটটা নিয়েই।
খালি প্যাকেটটা নিয়েও মিষ্টির দোকানদাররা ব্যবসা করতেই পারে। তবে আলাদাভাবে। মিষ্টি এক কেজিতে এক কেজিই দিতে হবে। এক কেজি মানে ৮০০ গ্রাম হতে পারে না। এক কেজি মানে ১০০০ গ্রাম।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথাও যদি বলি সেখানে মিষ্টি ওজনে কম দেয়া হয়না। প্রায় ওজনহীন পলিপ্যাক দিয়েই মিষ্টি পরিমাপ করে বিক্রি করা হয়। ভারতের যে ক’টি প্রদেশ আমি ভ্রমণ করেছি সেখানে দেখেছি নর্মাল একটি প্যাকেট ফ্রি দেয়ার জন্য রাখেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। যারা বিশেষ প্যাকেট কিনতে চাইবেন, তাদের জন্য বিভিন্ন রকমের খালি প্যাকেট বিক্রি করা হয় মিষ্টির দোকানগুলোতে। ধরুন ট্রেনে খাবার জন্য কেনা মিষ্টিগুলো নেয়ার জন্য আপনি একটি প্যাকেট পছন্দ করে কিনে নিতে পারবেন। গরম কিছু কিনলেন- তাপমাত্রা ধরে রাখার মতো বিশেষ প্যাকেটও পাবেন দোকানদারের কাছে। কিংবা মিষ্টি নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সময়; আপনার পছন্দ মতো সুন্দর প্যাকেটও কিনতে পারবেন। মান ও সাইজ অনুযায়ী প্যাকেটের দাম ভিন্ন ভারতে। আপনি বাসা বাড়িতে খাওয়ার জন্য মিষ্টি কিনলে আপনাকে কোন অতিরিক্ত প্যাকেট কিনতে হবেনা। ফ্রি নর্মাল প্যাকেট দিয়েই মিষ্টি বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে। ওজনে মিষ্টি এক কেজিতে এক কেজিই পাবেন। পাক্কা এক হাজার গ্রাম কিন্তু। বাংলাদেশের মিষ্টি ব্যবসায়ীরা এই নিয়মটি অনুসরণ করতে পারে। কিংবা নিজেদের মনগড়া যা খুশি নিয়ম বানাতে পারে। কিন্তু ওজন ঠিক রাখতে হবে।
বাংলাদেশে এসব দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। ভোক্তা অধিকার আইনসহ বিভিন্ন আইনও আছে। খাবারের মান যাচাই করার জন্যও আলাদা কর্তৃপক্ষ আছে। কিন্তু তারা বাস্তবে কি করছে ক্রেতারা দেখছেন। তাই আমিও তাদের কাছ থেকে তেমন কিছু আশাও করছিনা। আমি বরং মিষ্টি বিক্রেতাদের কাছ থেকে আরো ভালো কিছু আশা করতে পারি। মিষ্টি বিক্রেতারা লাভ করার জন্য দাম যা খুশি বাড়িয়ে হলেও ওজন ঠিক রাখুক। সিন্ডিকেট করে এক কেজি মিষ্টি এক হাজার টাকায় বিক্রি করলেও এখানে তেমন বলার মতো কেউকে দেখছিনা। যেখানে ওজনে এক কেজিতে ৮০০ গ্রাম দিলেও কেউ কিছু বলছে না।
তবে এই সচেতনতা আসতে হবে ক্রেতাদের মধ্য থেকেই। আমি এক কেজি যখন কিনবো, এক কেজি ওজনে পাচ্ছি কিনা।
বাংলাদেশের মিষ্টি ব্যবসায়ীদের আমি বলি কাগজ ব্যবসায়ী। কারণ তারা মিষ্টির নামে কাগজ বিক্রি করছে। আর নিজেরা বানিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা নামক কাগজগুলো। আসলে সবই কাগজের ব্যাপার!
তবে ক্রেতারা যেন মিষ্টির নামে কাগজ না খায়। গু খাচ্ছে খাক। গু মানে অনেকেই নাও বুঝতে পারেন। জি। ঠিকই বলছি। মিষ্টিগুলোতে কি পরিমাণ পায়খানার জীবানু থাকে তা একবার পরীক্ষা করে দেখতেই পারেন।
পরীক্ষা না করা পর্যন্ত আপাতত নিজের কাছে অবশ্যই প্রশ্ন রাখতে পারেন- মিষ্টির নামে গু কিনবেন? নাকি কাগজ কিনবেন?

লেখকঃ মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল
একজন সংবাদকর্মী ও তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *