সংসদ রিপোর্টার: রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জেগে আছেন বলেই দেশের ১৭ কোটি মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। এ কারণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণ নৌকার পক্ষে ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে জঙ্গী-সন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী দুর্নীতিবাজদের জোট বিএনপি-জামায়াতকে। তাই জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত এই দলকে নিয়ে সংসদে অযথা কথা বলে তাদের প্রচার বাড়ানো মোটেই উচিত নয়।প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সরকারী দলের মনোরঞ্জন শীল গোপাল, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, মোসাঃ তাহমিনা বেগম, কাজী নাবিল আহমেদ, বেগম শামসুন নাহার, সাইমুম সরওয়ার কমল, অপরাজিতা হক, শফিকুল আজম খান, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, আনোয়ার হোসেন খান, রতœা আহমেদ, কাজী কানিজ সুলতানা, আবদুল মমিন ম-ল, শামীমা আক্তার খানম, ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ও মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার জাতীয় ঐক্যের ডাকে জাতীয় পার্টি তার পাশে রয়েছে এবং থাকবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কিন্তু সংসদে কেউ কেউ সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদকে স্বৈরাচার বলেন। এতে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে। জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি সরকারের ভাল কাজে সমর্থন দিলেও জনবিরোধী কোন কাজের কঠোর সমালোচনা করতে পিছুপা হবে না।বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, সংসদে সরকারী দলের কিছু সদস্য একটি বিশেষ দলের নেতা-নেত্রীদের নিয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এই বিশেষ দলটি জনগণ বার বার প্রত্যাখ্যান করেছে। অফিসে বসে প্রেস কনফারেন্স ছাড়া এই দলটির আর কোন কাজ নেই। অথচ সরকারী দলের কোন কোন সদস্য সংসদে এই দলটি নিয়ে বক্তব্য দিয়ে তাদের প্রচার কাজ ভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এই দলটি বার বার আন্দোলন-সংগ্রামের ডাক দিলেও জনগণ তাতে সাড়া দেয়নি। তাই জনগণের করের টাকায় পরিচালিত সংসদে দলটির সমালোচনা করে প্রচারে আনার কোন মানে হয় না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জেগে আছেন বলেই দেশের ১৭ কোটি মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। তবে শুধু উন্নয়ন করলেই হবে না, দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
হুইপ আতিউর রহমান আতিক বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে নৌকার পক্ষে গণরায় দিয়েছে। এই সুষ্ঠু নির্বাচন জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পেয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে কোনটা শহর, কোনটা গ্রাম তা এখন বোঝা যায় না।ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে শত শত মানুষ নিহত হলেও আজ পর্যন্ত একটিরও বিচার হয়নি। কিছু বিচার যদি হতো তবে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন নৃশংস রাজনীতি করার সাহস পেত না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স হতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে কেউ কোনদিন ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না।মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট বিপ্লব ঘটেছে। জনগণ সচেতন ছিল বলেই সন্ত্রাসীরা এবারের নির্বাচনে কিছু করতে পারেনি। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির কারণেই দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। যারা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে, তারা ভাল করেই জানে কেন দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। মনোনয়ন বাণিজ্য, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা, জামায়াতকে ধানের শীষ বরাদ্দ ও অতীতের দুঃশাসনের কারণেই জনগণ তাদের ভোট দেননি। কোন চোর নেতৃত্বকে জনগণ ভোট দেয়নি।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। শান্তিচুক্তির বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে। আগে আকাশে কালো মেঘ দেখলেই অন্ধকারাচ্ছন্ন পাবর্ত্য অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হতো। এখন পুরো পাবর্ত্য অঞ্চল বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত। এ এলাকার বেকারত্ব দূরীকরণে বেশি করে কল-কারখানা স্থাপনের দাবি জানান তিনি।সরকারী দলের সাইমুন সরওয়ার কমল মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে মাদক (ইয়াবা) পাচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার দাবি জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত খুনী জিয়াউর রহমান। আর এখন তার দল বিএনপি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যার চেষ্টা করেছে, এখনও করে যাচ্ছে। তাই এদের কোন ছাড় দেয়া চলবে না।সূত্র : জনকন্ঠ
প্রতিনিধি