মেধাবী ছাত্র আদনান তাসিন হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং স্পিড ব্রেকারের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন।
“ব্যর্থতার দায় সিটি কর্পোরেশনকে নিতে হবে” -ইলিয়াস কাঞ্চন।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখ বেলা ২টার সময় জোয়ার সাহারায় ঘাতক চালকের নির্মম প্রতিযোগিতার বলি হওয়া সেন্ট জোসেফ স্কুলের মেধাবী ছাত্র আদনান তাসিন হত্যার বিচার ও ৫ দফা দাবিতে ৩রা মার্চ ২০১৯, রবিবার বেলা ১১টায় শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে জোয়ার সাহারা এলাকাবাসীর আয়োজনে ‘সড়কে মৃত্যু থামাও’ এবং ‘বাশু বানান শুদ্ধকারী’র উদ্যোগে শোকসভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, নির্যাতন প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহবায়ক গোলাম রহমান দূর্জয়, নিহতের পিতা আহসান উল্যাহ পিন্টু, নিহতের ভাই আদনান সামিন। সভায় সংহতি প্রকাশ করেন নারীনেত্রী মিফতাহুল জান্নাত রহমান মনি। বাশু’র সভাপতি সমাজকর্মী জেনন জিহান এর সঞ্চালনায় শোকসভাতে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ছাত্রপরিষদের প্রতিনিধি এবং এলাকাবাসীও বক্তব্য প্রদান করেন। গুলশান ডিগ্রি কলেজ, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। শোকাহত এলাকাবাসীর এই সভায় একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “এখানে পথচারী পারাপারের জন্য নির্ধারিত ফুটওভার ব্রিজটি সিটি কর্পোরেশন সংস্কারের নামে বিকল্প ব্যবস্থা না করে সরিয়ে ফেলে। ফলে ব্যস্ত এ সড়কে মৃত্যুর মিছিলের দায়ভার সিটি কর্পোরেশন এড়িয়ে যেতে পারেনা।” তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে সিটি কর্পোরেশনের প্রতি আহবান জানান।
বিশিষ্ট সমাজকর্মী গোলাম রহমান দূর্জয় সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, “শুধু আশ্বাস নয়; সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিরোধ কল্পে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শক্রমে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে একটি কার্যকর সড়ক পরিবহন নীতিমালা প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবি।” সভায় নিহত তাসিনের পিতা বলেন,”আমি চাই আমার মতো যেন আর কারো বুক খালি না হয়। আমি সরকারের কাছে এর সুষ্ঠ বিচার চাই।” গাড়িটি আটক করা হলেও ঘাতক চালক গ্রেফতার না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেন।
সভার সঞ্চালক বাশু’র প্রতিষ্ঠাতা জেনন জিহান বলেন, “আমি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এই পথে যাতায়াত করছি। বাংলাদেশের অন্যতম ঝুকিপূর্ণ ব্যস্ততম যাতায়াত পথ হচ্ছে এই শেওড়া রেলগেট বাসস্ট্যান্ড।ক’মাস আগে হুট করে রাতের আধারে ওভারব্রিজ কেটে অর্ধেক অবস্থায় ফেলে রাখা হয় প্রায় ৫ দিনের মত। পথচারীরা বাধ্য হয়ে হাইওয়ে ডিভাইডার ডিঙিয়ে পার হতেন। ক’দিন পর দেখি সেখানে জেব্রাক্রসিং এর নামে সাদা রং করে পথ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তারাও হিমশিম খাচ্ছেন গাড়ি এবং পথচারী পারাপারে প্রতিদিন।
আর বর্তমানে এমন স্থানে একটি ওভারব্রিজ বানানো হয়েছে যা পথচারীদের কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দিবে বলেই মনে হচ্ছে। এই সড়ক ইতিমধ্যে কেড়ে নিয়েছে ৪টি প্রাণ! শেষতক মেধাবী তাসিনকেও কেড়ে নিলো এই অবহেলা। তাই আজ এলাকাবাসীরাই ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে সাথে নিয়ে নেমেছি, নিজেদের দুর্দশার চিত্র জানান দিতে।”
“নিরাপদ সড়ক চাই,” “We want Justice for Adnan Tasin” স্লোগানে মুখরিত মানবন্ধন, ৫ দফা দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়ে শান্তিপূর্ণ শোকসভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
৫ দফা দাবি:
১। আদনান তাসিন হত্যার বিচার চাই ও ঘাতক বাসচালককে আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।
২। বিকল্প ব্যবস্থা না করে কেন ওভারব্রিজ সরানো হলো? তার পূণর্স্থাপন করা হোক।
৩। জেব্রাক্রসিং এর দুইপাশে স্পিড ব্রেকার চাই।
৪। ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করা হোক এবং সিগন্যাল লাইটের বাস্তবায়ন চাই।
৫। বাস স্টপেজ এবং যাত্রীছাউনি প্রতিষ্ঠা করা হোক।
নির্বাহী সম্পাদক