Home » নতুন সরকারের শুরুতেই অনুমোদন পেল তিনটি ব্যাংক

নতুন সরকারের শুরুতেই অনুমোদন পেল তিনটি ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ রোববার রাতে নতুন তিন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়।
আরও তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে অনুমোদন পেল ১৪টি ব্যাংক। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বেঙ্গল কমার্শিয়াল, পিপলস ও সিটিজেন ব্যাংক নামে নতুন তিন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিকভাবে ব্যাংক তিনটিকে লেটার অব ইনটেন্ট বা আগ্রহপত্র দেওয়া হবে। এরপরই অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাকি কাজগুলো শুধু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

জানা গেছে, আজ রোববার বিকেল চারটায় শুরু হওয়া পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষ হয় রাত নয়টায়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাছের সাংবাদিকদের বলেন, তিনটি নতুন ব্যাংক অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব ব্যাংককে দুই বছরের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে। অনুমোদন পর্যায়ে ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা করে। নতুন এ তিনটি ব্যাংক অনুমোদন দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখিত ও মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।

২০০৯ থেকে মহাজোট সরকারের তিন মেয়াদে এখন পর্যন্ত ১৪টি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি নতুন ব্যাংক পেয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ পুলিশও। নতুন তিন ব্যাংকের অনুমোদনের ফলে দেশে মোট তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬২টিতে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ব্যাংক রয়েছে নাজুক অবস্থায়।

সূত্র জানায়, গত বছরের ২৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় রোববার অনুমোদন পাওয়া তিনটি ব্যাংকের বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে নথিপত্রের ঘাটতি থাকায় ওই সময় অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

নতুন তিন ব্যাংকের মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক পেতে আবেদন করেছিলেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। আওয়ামী লীগের সাংসদ মোরশেদ আলম বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক। প্রস্তাবিত এই ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়াল, পোশাক খাতের ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন, চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপ ও ম্যাক্স গ্রুপ, পোশাক খাতের লাবিব ও শারমিন গ্রুপসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী।

পিপলস ব্যাংক পেতে আবেদন করেছিলেন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে তাঁর বাড়ি। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ব্যবসা রয়েছে বলে দাবি করলেও এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত নথিপত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে পারেননি। এর আগে এক পর্ষদ সভা শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, এম এ কাশেমের সম্পদের হিসাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক সত্যায়িত হয়ে আসতে হবে।

আর সিটিজেন ব্যাংক পেতে আবেদন করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। প্রস্তাবিত এ তিনটি ব্যাংকই রোববারের পর্ষদ সভায় অনুমোদন পায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংক দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবেচনায় ব্যাংক হয়েছে। তা কিন্তু ভালো হয়নি, মানুষ ওই ব্যাংকগুলোকে আস্থায় নিতে পারেনি। এর ফলে আর্থিক খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি নতুন ও অভিনব ধারণা নিয়ে পেশাদারদের যুক্ত করে ব্যাংক পরিচালিত হয়, তাহলে হয়তো কিছু ভালো ফল আসতে পারে।

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। এরশাদ সরকারের মেয়াদে (১৯৮২-৯০) ৯টি ব্যাংক অনুমোদন পায়। ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের সময় নতুন ৮টি ব্যাংক অনুমোদন পায়। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে অনুমোদন পায় ১৩ ব্যাংক। আর ২০০৯ থেকে গতকাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে ১৪টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *