Home » বিশ্ব ইজতেমায় লাখো মুসল্লির ঢল

বিশ্ব ইজতেমায় লাখো মুসল্লির ঢল

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলেও শুক্রবার ফজর নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে দাওয়াতে তাবলীগের এই গণজমায়েতের মূল কার্যক্রম শুরু হয়। এ উপলক্ষ্যে গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে।

শুক্রবার ফজর নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক আম বয়ান পেশ করেন। ময়দানে বয়ান, জিকির, তালিম আর মাশোআরায় মগ্ন মুসল্লিরা।

শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে অংশ নিতে গাজীপুরের আশপাশের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ এসে ভিড় করেছেন। মূলত বুধবার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হয়েছেন মুসল্লিরা। বৃহস্পতিবার ভোরে একদফা আম বয়ান হয়। মাগরিবের নামাজের পর হয় আরেক দফা আম বয়ান।

ভারতের মাওলানা সাদ আহমেদ কান্ধলভীকে নিয়ে তাবলিগের দু’পক্ষের বিরোধের মধ্যেই এবার একসঙ্গে আয়োজন করা হচ্ছে ইজতেমা। প্রথম পর্বে আজ ও কাল সাদবিরোধী (কওমিপন্থী) এবং রবি ও সোমবার সাদপন্থী মুরব্বিরা ইজতেমা পরিচালনা করবেন। শনিবার প্রথম দফা মোনাজাত এবং সোমবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের ইজতেমা শেষ হবে।

এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের ও মাওলানা সাদ অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও সংঘর্ষ নিয়ে যে অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তার সমঝোতা হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর বিস্তৃত বিশ্ব ইজতেমা ময়দান প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। দেশ-বিদেশের মুসুল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন তাদের নির্ধারিত তাঁবুর নিচে। তারা জিগির-আজগার এবং আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব মিলিয়েই টঙ্গীর তুরাগ তীরে যেন মুসুল্লিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর ও তরুণসহ সব বয়সের মুসুল্লিরা পায়জামা পাঞ্জাবী পরে ও টুপি মাথায় ইসলামের এ মেলায় শরিক হয়েছেন।

ইজতেমা ময়দানে যতটুকু চোখ যায়, শুধু দেখা মিলে টুপি-পাঞ্জাবী পরা মুসুল্লিদের। মাথার ওপর চটের তাবু, নিচে সবুজ ঘাস।

গত জানুয়ারি মাসে ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলে সংঘর্ষের পর ইজতেমা অনুষ্ঠান স্থগিত হয়ে যায়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মুসল্লি নিহত ও পাঁচ শতাধিক মুসল্লি আহত হন। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে দুইপক্ষকে একসঙ্গে এনে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের কার্যক্রম শুরু করেন।

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বিআরটিসি মুসুল্লিদের আনা-নেয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইজতেমা মাঠের সংস্কার কাজ এবং সেবামূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করেছে। বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ইজতেমা মাঠে পাঁচটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপির কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার, র‌্যাবের ১০টি ওয়াচ টাওয়ার, মুসুল্লিদের জন্য ৩৫০টি অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ, ওজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ১৩টি গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন তিন কোটি ৫৪ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আকাশ ও নৌ-পথে পুলিশ, র‌্যাবের নিয়মিত টহল। নিরাপত্তা চাঁদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে টঙ্গী শিল্পনগরী পুরো শহরটিকে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *