Home » স্বামী চাইলে স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা করতে পারে

স্বামী চাইলে স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা করতে পারে

।।এডভোকেট সাইফুদ্দিন খালেদ।।

আমাদের সমাজে পুরুষেরাও নিজের ঘরে স্ত্রীর কাছে নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। লজ্জায় ক্ষোভে কেউ মুখ খুলতে চায়না এ বিষয়ে। স্বামী তার পিতামাতার সাথে যৌথ পরিবারে থাকতে চাইলে স্ত্রী চায় একক পরিবার। অনেক স্ত্রী আছে যারা শাশুড় শাশুড়িকে নিয়ে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। অনেকে করেনা। স্ত্রী তার মাকে সঙ্গে রাখতে বাহনা থাকলেও নিজের শাশুড়িকে নয়। স্বামীর পিতামাতা, ভাইবোনকে কিছু দিলে খোঁজ খবর নিলে নানা বিপত্তি তো আছেই। স্বামী তার পিতামাতার জন্য কিছু আনলে বা খরচ করলে অনর্থক স্ত্রীর নানা বাহনা থাকবেই। এ সময় স্ত্রী এমন সব কথা বলবে যা সম্ভব নয়, কিংবা ঝগড়া হয়। হঠাৎ ৫ ভরি স্বর্ণ চাইবে! অথবা শহরে নিজের নামে বাড়ী করতে বাহনা দিবে, কিংবা , বিভিন্ন অজুহাতে বা কেনাকাটার জন্য দুই লক্ষ টাকা দিতে হবে ইত্যাদি। অন্যথায় স্বামীকে সুখে থাকতে দিবেনা।মানসিক নির্যাতন তো ধারাবাহিক থাকবেই বা স্ত্রী তার বাপের বাড়ী চলে যাবে, আরো কত কি?
এ সব নিয়ে ঝগড়া হয়না এমন পরিবার আমাদের সমাজে বলতে গেলে খুবই কম। নারী সমাজ মায়ের জাতি। তাই আমি নোংরা ভাষায় বলবনা। কিন্তু দুই দিনের দুনিয়াতে শাশুড় শাশুড়িকে আপন করে নিয়ে মিলেমিশে থাকার মধ্যে যে কত সুখ আনন্দ, অনেকে কেন বুঝতে চেষ্টা করেনা, বুঝে আসেনা। আবার অনেক ক্ষেত্রে মেয়ের মা, বোনেরা, মেয়ে পক্ষ অনর্থক গায়ে পড়ে অন্যের সংসারে আগুন জ্বালানোতে ব্যস্ত থাকে। এতে কোন প্রতিবাদ হলে স্বামীর উপর চলে প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতন। অনেকের নিরবে সহ্যগুণ থাকে, অনেকের থাকেনা। আবার অনেকে এ নিয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটায়। আত্মহত্যা কিংবা খুন খারাবিসহ। এ সব তুচ্ছ ঘটনা মহুর্তে মানুষের পুরো জীবন নষ্ট করে দিতে পারে। এমনকি পুরো পরিবারের মধ্যে নেমে আসতে পারে ভয়াবহ অন্ধকার। সুতরাং এ সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আপনি/স্বামীও আইন আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।

এমন মহুর্তে আপনি আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ও ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন। সে মামলা দায়ের পর বিচারক আদালত সরাসরি আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি অথবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দিতে পারেন। অথবা মামলাটি থানায় তদন্তের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। আর তদন্ত সঠিক এলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারক মামলাটি আমলে নেবেন।

আইনে বলা আছে যৌতুক গ্রহণই নয়, যৌতুক প্রদান ও যৌতুক দাবি করাও শাস্তিমূলক অপরাধ। এ আইন অনুযায়ী যৌতুক দাবি করার কিংবা আদান-প্রদানের এক বছরের মধ্যে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে হবে। এই আইন অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছর মেয়াদের কারাদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয় শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে। এ ছাড়া মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে উল্টো বাদীর সাজা হতে পারে।

সাধারণত আমরা জানি যৌতুক চাইলে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। তবে কিন্তু স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে যৌতুক চাইলেও স্বামী আদালতে যৌতুকের মামলা করতে পারবেন।
তবে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহরের টাকা ও ভরনপোষণ দাবি করে সে ক্ষেত্রে যৌতুকের মামলা গ্রহণযোগ্য হবে না।

এছাড়াও স্ত্রীর পরকিয়া, নানা ব্যভিচার, প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গের মত অজস্র অপরাধের সুষ্ট বিচার না পেয়ে অসংখ্য পুরুষ নিরবে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দেয় অথবা আইনী ঝামেলা থেকে বাচঁতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অনেক দামি দামি পুরুষ নারী নির্যাতন নামক আইনী কঠিন ধারার মারপেঁচ থেকে বাচঁতে, স্বীয় ইজ্জত বাচাঁতে না পেরার দেশে চলে যায়।

এমনও অসংখ্য ঘটনার নজির আছে স্বীয় স্ত্রীকে পরপুরুষের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখে প্রতিবাদ করার ফলে উল্টো স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মিথ্যা মামলায় হাজত বাস করতে।

তবু আমাদের সমাজে এখনো স্ত্রীদের মত স্বামীরা সহজে নিজ স্ত্রীর বিরুদ্বে লোকমুখে শুনার ভয়ে শতভাগ সত্য মামলা ও দায়ের করতে চায়না। অথচ নিজের জীবন শেষ না করে,আত্মহত্যা না করে সংশ্লিষ্ট ধারায় স্ত্রী বিরুদ্বে মামলা করতে পারে অথবা নিজের মোরব্বিদের মধ্যস্থতায় আপোষের চেষ্টা করা যায়, তাও না হলে আইনে ডিভোর্স দেয়ার অধিকার তো আছে।

স্ত্রীরা মায়ের জাতী, বোনের জাতী। সবাই বখাটে আমি বলবনা। সবাই বখাটে হলে সমাজ এখনো এত সুন্দর থাকতনা।

লেখক: সাইফুদ্দিন খালেদ
এডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কক্সবাজার। এবং সংসদ সদস্য প্রার্থী, কক্সবাজার-৪, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮।
ই-মেইল: sk80_cox@yahoo.com মোবাইল: ০১৮১৯-৬২৪১২০

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *