আতাহার আলী খান, ক্রিকেট জগতে সুপরিচিত একটি নাম। ধারাভাষ্যকার হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সাবেক বাংলাদেশ ক্রিকেটার।
আজ আতাহারের শুভ জন্মদিন। ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় জন্ম নেন তিনি। লম্বা গড়নের মানুষটি ’৮০’র দশকে জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন। দলে তার অবস্থান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওপেনিংয়ের পাশাপাশি করতেন মিডিয়াম পেস।
বাংলাদেশের ক্রিকেট রেনেসার অন্যতম সদস্য ছিলেন আতাহার। ক্রিকেট দুনিয়ায় টাইগারদের আজকের এ শক্ত ও সম্মানিত ভিত গড়তে যেসব ক্রিকেটারের অবদান রয়েছে তম্মধ্যে তার নাম নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল। দেশের জার্সিতে ১৯ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। প্রায় ৩০ গড়ে ৫৩২ রানের পাশাপাশি শিকার করেছেন ৬ উইকেট।
ধারাভাষ্যকার হিসেবে আতাহার নিবেদিত প্রাণ। ২০০৩ সালের কথা। পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক মুলতান টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। অলক কাপালির একটা ক্যাচ ডাইভ দিয়ে ধরতে গিয়ে মাটিতে ফেলে দিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক উইকেটকিপার রশিদ লতিফ। তবে আম্পায়ারের দিকে পেছন ফিরে থাকায় কৌশলে মাটি থেকে বল তুলে আউটের আপিল করেন। আম্পায়ার টিভি রিপ্লের সাহায্য ছাড়াই আউট দিয়ে দিলেন।
ধারাভাষ্য কক্ষে প্রতিবাদ করে উঠলেন আতাহার। বললেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এটা অবিচার হলো। অন্য ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা বললেন, ‘টিপিক্যাল বাংলাদেশি কমেন্ট’। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে আতাহার বললেন, ‘এন্ড রশিদ ডিড হোয়াট ইজ টিপিক্যাল পাকিস্তানি স্টাইল’। এই একটা কমেন্ট করে ঝড় তুলে ফেলেছিলেন মিডিয়াতে। রিপ্লে দেখার পর, ম্যাচ রেফারির সিদ্ধান্তে পাঁচ ম্যাচের জন্য রশিদ নিষিদ্ধ হন ।
কমেন্ট্রি বক্সে আতাহার এক নির্ভীক যোদ্ধা। একটা সময় সবাই যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতো, খোঁচা দিত, তিনি ধৈর্য নিয়ে সেসবের উত্তর দিতেন। বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয় এসেছে আতাহারের হাত ধরেই। ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে মোহাম্মদ রফিকের সঙ্গে ১৩৭ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। করেছিলেন ৪৭ রান। তাদের এ জুটিতে কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিকে জয়লাভের গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ।
’৮৬, ’৯৪ ও ’৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে খেলেছেন আতাহার। ১৯৮৫ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ঢাকায় তিন-দিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
’৮৮’র অক্টোবরে উইলস এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন আতাহার। ভারতের বিপক্ষে ১৬, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২২ এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৩০ রান করেন তিনি।
’৯০ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে শ্রীলংকার বিপক্ষে অপরাজিত ৭৮* রান করে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ইনিংসটিতে ছিল তিনটি বিশাল ছক্কা।
’৯৪-এ ঢাকায় সার্ক ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শ্রীলংকা “এ” দলকে হারায় বাংলাদেশ। আতাহার সেই ম্যাচে করেন ৫২ রান।
আতাহারের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৮২। ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এ ইনিংস খেলেন তিনি। ওই বছর মোহালিতে ভারতের বিপক্ষে ৩৩ রানে ২ উইকেট দখল তার সেরা বোলিং ফিগার। এ খেলায় তিনি রাহুল দ্রাবিড়কে আউট করেছিলেন।
আতাহার আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে যখন ঘরোয়া চার দিনের ম্যাচ শুরু হয় (তখনো প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা পায়নি ম্যাচগুলা) আতহারের ক্যারিয়ার তখন শেষ প্রায়। এজন্য মাত্র ৩ টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ খেলেছেন ক্যারিয়ারে। বর্তমানে আতহার আলী খান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী ধারাভাষ্যকর। কমেন্ট্রি বক্সে বাংলাদেশের হয়ে কথা বলা এক যোদ্ধা। ব্যাট ছাড়ার পর যেন মাইক্রোফোন হাতে এখনো নট আউট!
প্রতিনিধি