দুর্নীতির মামলার রায়ে দণ্ডিত হওয়ার পর আজ ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হলো।
তার মুক্তির জন্য আজ দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এ ছাড়া শনিবারও ঢাকা মহানগরী বাদে দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে তারা।
জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি পথে এগোলেও গত এক বছরে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তার দল। এ ছাড়া তারা রাজপথেও জোরদার আন্দোলনে নামতে পারছে না।
দেখা গেছে, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিতে দুটি উপায়ের কোনোটিতে এখন পর্যন্ত সফলতা পায়নি দলটি।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা ৩৬ মামলার মধ্যে চারটির জামিন এখনও বাকি। ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুতে সমস্যা রয়েছে।
তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কারাগারে খালেদা জিয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়েন, এবাদত-বন্দেগি করেন এবং বই পড়ে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান।
গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে ছাড়া অংশ নিয়েছিল বিএনপি। ধারণা করা হয়েছিল, সামান্য সুষ্ঠু ভোট হলেও ফল তাদের পক্ষে যাবে। এর পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে।
কিন্তু নির্বাচন শেষে সেই প্রত্যাশা পূরণ তো হয়নি; বরং ব্যাপক ভরাডুবি হওয়ার পর দলটি আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এখন পরবর্তী করণীয় নিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
তাদের প্রশ্ন- বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে থেকেই দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন, নাকি তার মুক্তির জন্য কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে। তবে সরকার না চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব না বলেও দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে বিএনপি কী সমঝোতায় যাবে, এমন কথাও চাউর রয়েছে। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি পথে একেবারেই অসম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, একের পর এক মামলায় জড়ানো হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনোভাবেই তাকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, তবে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এর কোনো ভিত্তি নেই। আপিলে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন।
গত বছর ৩০ অক্টোবর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার নিম্নআদালতের দেয়া পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। সম্প্রতি এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
আর ২৯ অক্টোবর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ মামলায় খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন আইনজীবীরা।
আপিলটি এখনও হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়নি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তার মুক্তি সম্ভব নয়; এটি তারা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন।
নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬ মামলার মধ্যে দুর্নীতির মামলা ৫টি। এগুলো হলো- জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা।
পাঁচটি মামলাই এক-এগারোর সময়ে করা। বাকি ৩১টি ২০১৪ সালের পর করা। মূলত রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালন এবং ঋণখেলাপির অভিযোগে এসব মামলা হয়।
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
ওই দিন থেকেই কারাগারে আছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এখন খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হলে কুমিল্লায় হত্যা, জিয়া অরফানেজ, জিয়া চ্যারিটেবল ও ঢাকার মানহানির মামলায় জামিন পেতে হবে।
প্রতিনিধি