Home » ক্যানসারের চিকিৎসা এখন দেশেই সম্ভব

ক্যানসারের চিকিৎসা এখন দেশেই সম্ভব

ক্যানসার শব্দটা শুনলেই মানুষের মনে আতঙ্ক ভর করে। রোগী তো বটেই, পুরো পরিবারই যেন আতঙ্কগ্রস্ত মনে দিন যাপন করতে থাকে। তবে চিকিৎসকেরা বলেন, অসংক্রামক ব্যাধির অন্যান্য রোগের মতোই ক্যানসারকেও সহজভাবে নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হবে। আর ক্যানসারের আন্তর্জাতি কমানের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব।

প্রতিবছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্যানসার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘দ্য ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি)’ এ বছর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছে। ক্যাম্পেইনের প্রতিপাদ্য ‘আমি এবং আমি করব’ অর্থাৎ ক্যানসার হওয়া মানে ভেঙে পড়া নয়। এ ক্যাম্পেইনে রোগীদের প্রতি ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের ব্যক্তিগত পদক্ষেপ যেন ভবিষ্যতে প্রভাব রাখে।

অ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকার ক্যানসার বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট রাজু তিতাস চ্যাকো বলেন, ‘ক্যানসার শব্দটা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। কিন্তু ক্যানসার নিয়ে মানুষের আরও বেশি কথা বলা উচিত এবং বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। যেমন ডায়বেটিস কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি রোগ। কিন্তু এটা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ কম, ক্যানসারকেও সেভাবে দেখতে হবে। তাহলে তা রোগী ও তার পরিবারকে তা মানসিকভাবে চাপমুক্ত করবে।’

দক্ষিণ ভারতের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের অনকোলজিস্ট বিভাগের সাবেক প্রধান রাজু তিতাস চ্যাকো প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের শরীর অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি। এই কোষ কখনো যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে, তখন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটা তখন রক্তসহ শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্যানসারের দুটি ধরন থাকে—বাধাহীনভাবে বাড়তে থাকা এবং দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়া। তিনি বলেন, ক্যানসার শুরুতে ধরা পড়লে সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিন্তু শেষে গিয়ে ক্যানসার ধরা পড়লে তখন রোগীর জীবন দীর্ঘায়িত করার দিকে নজর দেন চিকিৎসকেরা।

রাজু তিতাস চ্যাকো বলেন, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়ে, তাহলে আক্রান্ত জায়গা সম্ভব হলে কেটে ফেলে দেওয়া হয়। তাহলে আর ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে না এবং রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা এখন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকতে নির্ণয় করার চেষ্টা করছেন, যাতে এটা শরীরে দ্রুত ছড়াতে না পারে।

দ্য ইকোনমিস্টের ২০১৭ সালের তথ্য তুলে ধরে রাজু তিতাস চ্যাকো বলেন, বাংলাদেশে মৃত্যুর ষষ্ঠতম কারণ হচ্ছে ক্যানসার এবং প্রতি ১০ জনের ১ জন মারা যায় ক্যানসারে। তা ছাড়া এ দেশে যাদের ক্যানসার হয়, তার ৬০ ভাগ হচ্ছে ৩০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষ এবং তারা হচ্ছে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী।

রাজু তিতাস চ্যাকো বলেন, বাংলাদেশে শীর্ষ দশটি ক্যানসারের মধ্যে স্তন ক্যানসার এক নম্বরে রয়েছে। এরপরে আছে খাদ্যনালির ক্যানসার, জরায়ু মুখের ক্যানসার ও ফুসফুস ক্যানসার। স্তন ক্যানসার এ দেশে বাড়ছে। তবে পশ্চিমা অর্থাৎ উন্নত বিশ্বে এর পরিমাণ আরও বেশি। কিন্তু উপমহাদেশীয় দেশগুলোতে ধীরে ধীরে বাড়ছে। জীবনযাত্রার পরিবর্তনকে এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন চিকিৎসকেরা।
অন্যদিকে ক্যানসারের এখনো অন্যতম বড় কারণ হিসেবে ধূমপানকে দায়ী করেন চিকিৎসকেরা। অ্যাপোলোর চিকিৎসক রাজু তিতাস চ্যাকো বলেন, ধূমপান বন্ধ হলে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্যানসার হওয়া থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।

বাংলাদেশে ক্যানসারের এখন উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ক্যানসার কেয়ার সেন্টারে ডায়াগনসিস থেকে শুরু করে চিকিৎসার সব ব্যবস্থাই আছে। আধুনিক সব সরঞ্জামসহ সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি রয়েছে, ব্লাড ক্যানসারের জন্য ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টারও আছে। টিউমারের জন্য রেডিও থেরাপি, কেমোথেরাপির ভালো সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগে জোজো ভি জোসেফ, মেডিকেল অনকোলজিতে ফেরদৌস শাহরিয়ার সাঈদ এবং রেডিয়েশন অনকোলজিতে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য।

অ্যাপোলোর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, করপোরেট ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং বিভাগের জিএম আফতাব মাহমুদ খুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এ হাসপাতালে ক্যানসার ডে কেয়ার সেন্টারের সুবিধা রয়েছে এবং ক্যানসারের অস্ত্রোপচারও হয় বলে জানান। চিকিৎসক রাজু তিতাস চ্যাকো বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও ইমার্জেন্সির জন্য কল করতে পারেন ১০৬৭৮ নম্বরে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *