Home » ঝুপ ঝাড় মুক্ত হচ্ছে সিলেট!

ঝুপ ঝাড় মুক্ত হচ্ছে সিলেট!

নগরীর সড়কজুড়ে বৈদ্যুতিক তারের প্যাচগোছ; বিদ্যুতের সাথে টেলিফোন, স্যাটেলাইট, ইন্টারনেটের তার মিলিয়ে  রীতিমত জঞ্জাল পাকিয়ে আছে নগরীর সড়কগুলোর উপরে। এসব তার ছিড়ে প্রয়াশই ঘটছে দুর্ঘটনা। আর সামান্য ঝড়বৃষ্টিতে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ার ঘটনা তো ঘটেছে নিয়মিতই। এবার এই জঞ্জাল আর দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সিলেট নগরবাসী।

সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে নগরীতে শুরু হয়েছে ভূ-গর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নির্মাণ কাজ। দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো সিলেটেই ভূ-গর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানা হচ্ছে। 

বিদ্যুৎবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক অবস্থায় ৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎলাইন মাটির নিচ দিয়ে টানা হবে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি টাকা। বিদ্যুতের সাথে অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ক্যাবল তারও মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। আর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সকলের সাথে সমন্বয় করে এই কাজ করার। যাতে ঝুঁকি এড়ানো যায় এবং বারবার সড়ক খুঁড়োখুঁড়ির ঝামেলা এড়ানো যায়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটের বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনগুলো পুরনো হয়ে যাওয়া এবং ঝড়বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা হওয়ায় এই এলাকায় প্রায়ই বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে যায়। এতে অনেক এলাকা বিদ্যুহীন হয়ে মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। ঘটে দুর্ঘটনাও। এই সমস্যা সমাধাণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্যোগে ২০১৬ সালে সিলেটের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৮শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাশ হয়। ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয় এই প্রকল্পের কাজ। ওই প্রকল্পের অধীনেই ভ’-গর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইন টানা হচ্ছে। শনিবার যার কাজ শুরু হয়েছে।

সিলেটের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এমএম সিদ্দিক বলেন, ১৮শ’ কোটি টাকার যে প্রকল্পের কাজ চলছে তার আওতায় ২২/২৩ কেভি সাব স্টেশন বসবে, আড়াই হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন টানা হবে, সাড়ে তিন হাজার ট্রান্সফরমার বসানোসহ পুরো বিভাগে আরো অনেক কাজ হবে। এই প্রকল্পের আওতায়ই ভূ-গর্ভস্থ সঞ্চালন লাইনের কাজ শুরু হয়েছে। 

তিনি বলেন, সরকার সব নগরীরই বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প নিয়েছে। অন্যান্য শহরে জরিপ চলছে। সিলেটে কাজটি শুরু হয়েছে। সিলেট নগরীতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ৭ কিলোমিটার ভ’-গর্ভে নেওয়া হবে। এতে সফলতা আসলে ধীরে ধীরে বাকীগুলোও নিয়ে যাওয়া হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই এলাকার বিদ্যুৎ সাব স্টেশন কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে ভূ-গর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন আম্বরখানা হয়ে যাবে চৌহাট্টায়। সেখান থেকে নগরীর জিন্দাবাজার হয়ে সিটি কর্পোরেশনের দিক দিয়ে সিলেট সার্কিট হাউজ পর্যন্ত ও রিকাবীবাজার হয়ে ওসমানী হাসপাতাল পর্যন্ত ভ’-গর্ভস্থ লাইন টানা হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোল (বাপা) সিলেটের সহ-সভাপতি এডভোকেট এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, সড়কের উপর ঝুলে থাকা তারের এই জঞ্জালের কারণে পর্যটন নগরী সিলেটের সৌন্দর্যহানি ঘটছিলো। এছাড়া বিভিন্ন তারে প্যাচ লেগে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটে নিয়মিত। ফলে মাটির নিচ দিয়ে লাইন টানার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে সংশ্লিস্ট সকল বিভাগের সাথে সমন্বয় করেই এ কাজটি করতে হবে। এতে বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নিতে হবে। যাতে আগামীতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস করা যায় এবং বারবার সড়ক খোঁড়ার প্রয়োজন না পড়ে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আলম, বিদ্যুতের লাইনের সাথে স্যাটেলাইট, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের লাইনও আন্ডার গ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। এই কাজ শেষ হলে উপরের সব তার অপসারণ করা হবে।

এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নাগরিক ভোগান্তি কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আন্ডার গ্রাউন্ড বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণের ফলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে সিলেটবাসী। তারের জঞ্জাল কমিয়ে নগরীকে একটি স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে পুরো নগরীকে আন্ডার গ্রাউন্ড বৈদ্যুতিক লাইনের আওতায় আনা হবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *