Home » গেইলের বিধ্বংসি বেটিংয়ে, দাপুটে জয়ে শীর্ষে রংপুর

গেইলের বিধ্বংসি বেটিংয়ে, দাপুটে জয়ে শীর্ষে রংপুর

লক্ষ্যটা ছিল মামুলি, ৭৩। জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল রংপুর রাইডার্সের। হেসেখেলেই জিতল মাশরাফি বাহিনী। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে ৯ উইকেটে হারাল তারা। দাপুটে এ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গ্রুপপর্ব শেষ করল টম মুডির শিষ্যরা। এ রিদম নিয়েই সুপার ফোরে নামবে তারা।

১২ ম্যাচে ৮ জয় ও ৪ পরাজয়ে ১৬ পয়েন্ট রংপুরে। সমানসংখ্যক ম্যাচে সমান জয়-হারে একই পয়েন্ট কুমিল্লারও। তবে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় চূড়ায় মাশরাফিরা। সবচেয়ে বড় কথা, এ ম্যাচে ঘুম ভাঙার আভাস দিয়েছেন ক্রিস গেইল। বরাবর বিপিএলে ত্রাস ছড়ানো এ ব্যাটসম্যান এবারের টর্নামেন্টে রয়েছেন ঘুমিয়ে। ১২ ম্যাচে ফিফটি মাত্র একটি। তবে এদিন সাবলীল ব্যাটিং করেছেন তিনি।

জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় রংপুর। সঞ্জিত সাহার বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন মেহেদী মারুফ। তবে আর বিপদ হতে দেননি গেইল। দ্বিতীয় উইকেটে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে নিয়ে খেলা ধরেন তিনি। যোগ্য সহযোদ্ধার যথার্থ সমর্থন পান। ফলে দুজনের মধ্যে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। মারার বল মারেন আর ধরার বল ধরেন। এতে আরামসে জয়ের পথে এগিয়ে যেতে থাকে উত্তরবঙ্গের দলটি। শেষ পর্যন্ত ৬৩ বল ও ৯ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে তারা।

৩০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন গেইল। ক্যারিবীয় দানবের চেয়ে তুলনামূলক একটু বেশিই আক্রমণাত্মক ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। ২২ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন এ প্রোটিয়া। উভয়ই বিজয়ের বেশে মাঠ ছাড়েন।

রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সূচনাতেই ধাক্কা খায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। দলীয় খাতায় কোনো রান না তুলতেই নাহিদুল ইসলামের বলে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ক্যাচ দিয়ে আসেন তামিম ইকবাল। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে এ অফস্পিনারের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন আনামুল হক। খানিক পর মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে শহিদুল ইসলামকে ইমরুল কায়েস ক্যাচ প্র্যাকটিস করালে বিপাকে পড়ে দলটি।

সেই রেশ না কাটতেই শহিদুলের বলে মোহাম্মদ মিথুনকে লোপ্পা ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শামসুর রহমান। এতে চাপে পড়ে কুমিল্লা। এর মধ্যে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি থিসারা পেরেরা। দলীয় ২৩ রানে পঞ্চম উইকেট হিসেবে মাশরাফির দ্বিতীয় শিকার হয়ে তিনি সাজঘরের পথ ধরলে বিপর্যয়ে পড়ে ভিক্টোরিয়ানসরা। ফলে বিপিএল ইতিহাসে দলীয় সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার শংকা দেখা দেয় তাদের।

তবে তা হতে দেননি লিয়াম ডসন। পরে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন তিনি। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে লড়াইটা ভালোই করছিলেন তারা। এতে শংকা কাটিয়ে এগোচ্ছিল কুমিল্লা। তবে হঠাৎই খেই হারান জিয়াউর। দলীয় ৫৬ রানে রবি বোপারার বলে রাইলি রুশোকে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ফেরার আগে ২৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২১ রানের সংগ্রামী ইনিংস খেলেন এ হার্ডহিটার।

এরপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে কুমিল্লার ব্যাটিং লাইনআপ। টপঅর্ডারের মতো যাওয়া-আসার প্রতিযোগিতায় নামেন মিডলঅর্ডার ও টেলএন্ডাররা। বোপারার পরের বলেই সোজা বোল্ড হয়ে ফেরেন আবু হায়দার। প্রেক্ষিতে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগে তার। তবে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবে রূপ ধারণ করেনি। কিন্তু এতেই ১০০ রানের নিচে ইমরুলদের গুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

শেষ পর্যন্ত তাতে বাঁধ দিতে পারেননি কেউ। অল্পক্ষণ পর রানআউটে কাটা পড়েন ওয়াহাব রিয়াদ। এর জের না কাটতেই বোপারার তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ডসন। ফেরার আগে ২৪ বলে ২ চারে ১৮ রান করেন তিনি। কুমিল্লা শিবিরে শেষ পেরেক ঠুকেন অভিষিক্ত মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদি। তার শিকার হয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেন সঞ্জিত সাহা। এতে ৭২ রানেই গুটিয়ে যায় মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের শিষ্যরা।

কুমিল্লাকে এত অল্প রানে বেঁধে রাখার কৃতিত্ব দিতে হবে রংপুর রাইডার্সের সব বোলারকেই। তবে বেশি বাহ্বা পাবেন নাহিদুল ইসলাম, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও রবি বোপারা। মূলত এ ত্রয়ীর আগুন ঝরানো বোলিংয়ে এ রানে গুঁড়িয়ে গেছে ভিক্টোরিয়ানসরা। নাহিদুল ২ ওভারে ৯ রানের বিনিময়ে নেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে ১৮ রান খরচায় সমান ২ উইকেট ঝুলিতে ভরেন মাশরাফি।

আর ৩ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন বোপারা। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ১টি করে উইকেট নেন মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদি ও শহিদুল ইসলাম।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *