ডেস্ক নিউজ: ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় যেন একই সুঁতোয় গাঁথা। খালি চোখে বন্ধনের সেই সুঁতো দেখা না গেলেও একটি অন্যটির পরিপূরক। কিন্তু এই সবের মধ্যে সমন্বয় ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, নতুন কী প্রযুক্তি আসছে, তার খবর রাখা, প্রযুক্তির গতিপথ ধরে হাঁটা, সবাইকে জানানো, নিজেদের হালনাগাদ করে রাখাসহ ইত্যাকার নানা কাজ দেখা বা শোনার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু তা সব সময় করা হয়ে ওঠে না। এই তাগিদ থেকেই বছরে আয়োজিত হয় একটা সম্মেলন। এই সম্মেলনটা নিরেট কাগিরগরি। যে সম্মেলনে নেটওয়ার্কিংয়ের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত জ্ঞানও আহরণ করা যায়। ঠিক এমনই একটা সম্মেলন হলো সেনগ সম্মেলন। আগামী ২ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অপারেটর্স গ্রুপের (সেনগ) ৩২তম সম্মেলন। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে ৯ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান চলবে। শেষ হবে ১০ আগস্ট। সম্মেলনটির আয়োজক হিসেবে রয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। জানতে চাইলে আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘২০১৬ সালে এপনিক-৪২ হওয়ার কথা ছিল ঢাকায়। সে সময় হলি আর্টিজানে হামলার কারণে নিরাপত্তার সংকট দেখিয়ে আয়োজকরা সম্মেলন শ্রীলঙ্কায় সরিয়ে নেয়। বাংলাদেশ ইমেজ সংকটে পড়ে। এবার আমরা সেনগ সম্মেলন আয়োজন করে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং করবো। আমরা সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশে কোনও নিরাপত্তা সংকট নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন দেশে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশন করে বের হচ্ছে। তাদের আমরা মূল ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই এই সম্মেলনের মাধ্যমে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা কিছু ট্রেইনার তৈরি করতে চাই যারা দেশ বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। দেশের ইমেজ ব্র্যান্ডিং করবে।’ আইএসপিএবি সভাপতি জানান, ‘দেশে এন্ট্রি লেভেল ও মিড লেভেলের শিক্ষার্থীদের হাতে কলজে শেখানোর কোনও প্ল্যাটফর্ম নেই। দেশে এখন বাংলাগভ.,ইনফো সরকারের মতো বড় বড় নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে। এসব নেটওয়ার্ক মেইন্টেন করতে হলে দক্ষ জনবল প্রয়োজন। সেনগ সম্মেলনের বিভিন্ন ওয়ার্কশপে হাতে কলমে তা দেখানো হবে।’ তিনি আরও জানান, দেশ ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে যাচ্ছে, ব্যবহার হচ্ছে ৭০০ জিবিপিএস-এর বেশি ব্যান্ডউইথ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের উপস্থিতি বাড়ছে। ফলে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। এসব কারণে সম্মেলনটি দেশের প্রযুক্তি খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। জানা গেছে, এবারের সেনগ সম্মেলনের পাশাপাশি একই সময়ে আয়োজিত হবে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটর্স গ্রুপের (বিডিনগ) নবম সম্মেলন। এই আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি)। এই দুটি সম্মেলনে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নেবে। যাদের মধ্যে থাকবেন ইন্টারনেট প্রকৌশলী, নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, পুরো এই আয়োজনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেনগ-৩২ ওয়ার্কশপ প্রোগ্রাম, সেনগ-৩২ টিউটোরিয়াল ও সেনগ-৩২ কনফারেন্স। ২ থেকে ৬ আগস্ট প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওয়ার্কশপ চলবে। এই প্রোগ্রাম পরিচালনা করবে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল। কর্মশালাটির মূল উদ্দেশ্য হলো—ইন্টারনেট সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নে দেশি ও বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি। রাউটিং, সিকিউরিটি ও ভার্চুয়ালাইজেশন ট্র্যাকে ধারাবাহিকভাবে এই কর্মশালাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। একই ভেন্যুতে ৭ থেকে ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে সেনগ টিউটোরিয়াল। এই বিভাগে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর উপস্থাপনা থাকবে। বিশেষ করে রাউটিং ইন দ্য আইপি কোর, বিজিপি, ডাটা সেন্টার, সুইচিং টেকনোলজিস, স্যান, ভার্চুয়ালাইজেশন, সিকিউরিটি, ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট, মোবাইল ইন্টারনেট ইত্যাদি বিষয়ের ওপর আলোচনা থাকবে এতে। জানা গেছে, বিশ্বের ৮টি দেশের ফেলোরা এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। আর ১৩টি দেশ থেকে আসবেন প্রশিক্ষকরা। আয়োজনের শেষ দুই দিন (৯ ও ১০ আগস্ট) হবে সেনগের মূল কনফারেন্স। লা মেরিডিয়ানে এই কনফারেন্সে প্লেনারিসহ মোট ৬টি কারিগরি সেশন থাকবে। এদিন সেনগ, এপনিক ও ইন্টারনেট কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞরা ইন্টারনেট খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্ক অপারেশন্স, ডাটা সেন্টার, সিকিউরিটি, আইডিএস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। সেনগ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সেনগের ওয়েবসাইটে (http://www.sanog.org/sanog32/) করতে হবে। এছাড়া সরাসরিhttp://www.sanog.org/sanog32/reg.html এই লিংকে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।