ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর চলতি বছরের ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার মাস দুয়েক পরই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তুলতে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
চার মাস পরও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোতে বাড়ছে ক্ষোভ। বিএনপি বলছে, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করার সুযোগ নেই। আর জামায়াতে ইসলামী বলছে, নির্বাচনি সংস্কারে এক বছরের বেশি লাগার কথা না। মানুষ ভোটের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান দল দুটির নেতারা।
গত ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সকল প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ত সম্ভব হবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’
যদিও এর পরদিনই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ভোটের সম্ভাব্য সময় আরও কয়েক মাস পিছিয়ে দেন। গত ২২ ডিসেম্বরও এ নিয়ে কথা বলেন তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, ‘যেকোনো দলই বলতে পারে যে, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু এই সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য সংস্কার।’
এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি বলছে, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই ১৬ বছর আন্দোলন হয়েছে। তাই নির্বাচন দিতে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। কেউ একজন বা কোনো এক গোষ্ঠী বসে সংস্কার করবে, বাংলাদেশ এরপর এক শ বছর চলবে—এমন কোনো বিষয় তো এখানে নেই। সুতরাং যারা এসব কথা বলছে, তাদের একটু চিন্তা করা দরকার।’
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘কিছুসংখ্যক আঁতেল বসে বসে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, তারা সংবিধান সংশোধন করবে, তাদের ইচ্ছেমতো সংস্কার করবে যেখানে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই—এটাই আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়। যখন নির্বাচিত সরকার থাকে না, তখন এই ধরনের অনেক ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের’ দেখা পাওয়া যায়। কেনো আমাদের দেড়-দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।’’
আর জামায়াতের অভিযোগ, সরকারের সব কাজ ধীরগতিতে চলছে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘আমরা বলছি, সংস্কার করতে হবে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে। সেটা হতে পারে আগামী এক বছর বা এর কম সময়ও হতে পারে। এই সরকারের কাজের গতি নিয়ে সর্বমহলে একটি প্রশ্ন আছে। তাদের (সরকার) কাজের গতি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’
অনির্বাচিত সরকার সব সংস্কার করতে পারবে না বলেও মনে করেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা।