সপ্তাহখানেক পরেই বিদায় নিবে সবচেয়ে শীতলতম মাস পৌষ। তবে উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলা বাদে সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহের দেখা মেলেনি এই অবধি। এবার শীতের অনুভূতি রাজধানীতে খুব একটা তীব্র নয়। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। সেখানে পঞ্চগড়-দিনাজপুরসহ তিন-চারটি জেলায় দুই দফায় চলছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রির নিচে নামেনি। হিমেল হাওয়া, কুয়াশা এবং সূর্যের সীমিত উত্তাপের কারণে কয়েক দিন ধরেই উত্তরের বেশকিছু জেলায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে হিমেল বাতাস বাংলাদেশে ঢুকছে তাতে শীতার্ততা আরো বেড়ে যাচ্ছে। বছরের শুরুতেই শীতের যে তীব্রতা শুরু হয়েছে, তা চলতি মাস জুড়ে থাকতে পারে। বর্তমানের তেঁতুলিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে তা বিরতি দিয়ে ফের আগামী সপ্তাহে মাঘের প্রারম্ভে শুরু হবে। কনকনে শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশার বিস্তৃতি আজও থাকবে দেশ জুড়ে। তবে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, চলমান কুয়াশার প্রকোপ আগামী সোম-মঙ্গলবারের দিকে বিদায় নিতে পারে।
রাজধানীসহ সারা দেশেই বেড়েছে শীতের অনুভূতি। গতকালও ঘন কুয়াশার কারণে হজরত শাহজালাল বিমান বন্দরে চার ঘণ্টা ওঠানামা বন্ধ ছিল। নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা বিমানে চড়তে পারেননি। দেশের নদী অববাহিকা ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশায়। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার ব্যস্ততম নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল আট ঘণ্টা। ঘন কুয়াশায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে লঞ্চ ও কার্গোর মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারী নিখোঁজ হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক যুবক। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ায় এল নিনোর প্রভাবেই শীতকালে শৈত্যপ্রবাহ অতীতের মতো আর হচ্ছে না। এবার, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার কোনো লক্ষণ নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ কামরুল আহসান জানান, এখন শক্তিশালী এল নিনো চলছে। এটা থাকলে সাধারণত উপমহাদেশে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, আমরা সেটারই প্রতিফলন দেখছি।
তিনি বলেন, শীতকালে ঠান্ডা হওয়ার অন্যতম কারণ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা শুষ্ক বায়ু। পৌষ মাসের মাঝামাঝি হয়ে গেলেও, এই বায়ু এখনো সেভাবে সক্রিয় হয়নি বাংলাদেশে । আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজও দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। যে কারণে উড়োজাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, শীতের তীব্রতা চলতি মাসে থাকবে, কখনো বাড়বে বা কমবে। দিনে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও রাতের পারদ ৮ থেকে ১৬ ডিগ্রি এবং দিনের তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৬-২৭ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করবে। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে হিমেল বাতাস বাংলাদেশে ঢুকছে, তাতে শীতের অনুভূতি আরো বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা একটু কম থাকার কারণে সারা দেশেই শীতের তীব্রতা আছে এবং এই অনুভূতি মাস জুড়েই থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণকাল কমে গিয়ে তাপমাত্রা বাড়াতে পারে না, ফলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কম হয়। তখন শীতের তাপমাত্রা বাড়ে।
বার্তা বিভাগ প্রধান