‘বিশ্ব পেঙ্গুইন দিবস’। প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল এই দিনটিতে পেঙ্গুইন দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে সারা বিশ্বে। পৃথিবীর সব দেশে পেঙ্গুইনের দেখা না পাওয়া গেলেও সাদা-কালো এই প্রাণীটিকে পছন্দ করেন না এমন মানুষ গোটা ভূ-বিশ্বে খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর।
পেঙ্গুইনের বাস দক্ষিণ মেরুবলয়ের আশেপাশে। হিমশীতল সমুদ্রবাসী এইপেঙ্গুইন পাখিরা দুর্দান্ত সাঁতারু এবং তাড়া করে মাছ ধরে। হাঁটতে অপটু, তবে উপুড় হয়ে শুয়ে দুই হাতডানা নেড়েচেড়ে বরফের উপর দিয়ে এগিয়ে যায় অকপটে । বুক পেট ধবধবে সাদা, বাকি শরীর কালো বা নীলচে। মানুষের মতো হাঁটলেও খুব বেশী উচ্চতায় উড়তে পারে না এরা। তবে প্রাণীজগতে শান্ত জীব হিসেবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই পাখিটি।
তবে শুধু দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বা নয়নাভিরাম দৃশ্যের জন্য নয়। পেঙ্গুইন আমাদের বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম এক উপকারী একটি জীবও। এর বসবাস সুদূর হিমশীতল মেরুদেশে হলেও পরিবেশ রক্ষায় এর অবদান রয়েছে অসামান্য।
আর এই “বিশ্ব পেঙ্গুইন দিবসে” আমরা জানব পেঙ্গুইন সম্পর্কে অজানা আরও কিছু তথ্য। যেগুলি শুনলে স্বচক্ষে এই জীবটিকে চাক্ষুস করার ইচ্ছা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে আপনার।
তাহলে আসুন জেনে নিই পেঙ্গুইন সম্পর্কে অজানা আরও কিছু কথা….
১. সমুদ্রের জীবন সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে এই পেঙ্গুইনদের। পেঙ্গুইনরা ‘সেন্ডিনেল প্রজাতি’ হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণ তারা যে পরিবেশে বসবাস করে সেেই পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয়। সুতরাং তারা আমাদেরকে সমুদ্রের গভীর জলের ভিতরে কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। যদি সেগুলি সংরক্ষণ না করা হয় তবে আমরা গভীর সমুদ্রের আশ্চর্য রহস্যগুলি কখনই জানতে পারতাম না।
২. এই পেঙ্গুইনরা খাদ্য শৃঙ্খলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পেঙ্গুইনরা খাদ্য শৃঙ্খল এবং বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এরা যেমন প্রচুর জীবজন্তুদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে তেমনই এরা বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃঙ্খলার ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে এদের সংরক্ষণ না করা হলে এই ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে।
৩. মাটিকে সার সমৃদ্ধ করতে পেঙ্গুইনের ভূমিকা অনবদ্য। কারণ তারা মাটির পুষ্টি উপাদানের একটি বিশাল উৎস হিসাবে পরিচিত। তারা তাদের মলের সাহায্যে জমিকে উর্বর করার পাশাপাশি জলকেও পরিস্কার রাখে। ফলে পেঙ্গুইনদের সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করা হলে মাটি কম সমৃদ্ধ হতে পারে।
৪. বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনে সহায়তা করে এরা। তারা যে পরিবেশে বসবাস করে সেখানে কোনও সমস্যা দেখা দিলে এরাই প্রথম তা টের পায় এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীদের তা বুঝতে সহায়তা করে। ফলে হিমশীতল মহাদেশের অঅভ্যন্তরীণ বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় অনুঘটকের কাজ করে এই পেঙ্গুইনরা।
ফলে শুধু চোখের আরাম বা মনের তৃপ্তির জন্য নয়, পরিবেশের সুরক্ষায় অন্যদের মতো এদের অবদান কোনও অংশে কম নয়।
৫. পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সারা বিশ্বের বহু মানুষ পেঙ্গুইন পছন্দ করেন। যারফলে এদের দেখতে তাঁরা ছুটে যান মেরুদেশে বা হিমশীতল জায়গায়। ফলে সেখানকার
অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে এদের গুরুত্ব অপরিসীম।
৬. পেঙ্গুইন তাদের দলের বা প্রজাতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এরা যেমন প্রচুর পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করে না তেমনই পুপলেশনের মাত্রাও বজায় রাখতে পারে।
৭. পেঙ্গুইন হল এমনই একটি জীব যারা জল ও স্থল উভয় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও দুই পরিবেশেই নিজেদের অভিযোজিত করতে সক্ষম।
নির্বাহী সম্পাদক