Home » প্যানেল প্রত্যাশী সহকারী শিক্ষক নিয়োগ একটি যৌক্তিক দাবিঃ স্বপক্ষে মতামত

প্যানেল প্রত্যাশী সহকারী শিক্ষক নিয়োগ একটি যৌক্তিক দাবিঃ স্বপক্ষে মতামত

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ এর প্যানেল প্রত্যাশী সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যাশীরা ৩৭ হাজার মেধাবীরা মনে করেন যে “প্যানেল প্রত্যাশী সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ” বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যৌক্তিক দাবি। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে ভয়াবহ শিক্ষক সংকট বিরাজমান।

এই সংকট হতে উত্তরণে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্যানেল পদ্ধতির প্রবর্তনের জন্য সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা।

সারাবিশ্ব আজ করোনা নামক মহামারিতে বিপর্যস্ত এবং তার ভয়াল থাবা পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার উপর। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দরকার মানসম্মত, যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক। তাঁদের মাধ্যমেই প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষতিকে পুষিয়ে নেয়া এবং শিক্ষার গতিকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব। আমরা জানি, আমাদের দেশে বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগের যে পদ্ধতি বিদ্যমান রয়েছে তাতে কোনোভাবেই শিক্ষক সংকট দূর করা সম্ভব নয়।

কারন দীর্ঘ নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারনে পূর্বের চেয়ে আরো বেশি পদ শূন্য হয়ে যায়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ার প্রকাশিত তথ্যমতে বর্তমানে প্রায় ৪০হাজারেও অধিক সহকারী শিক্ষকের শুন্যপদ রয়েছে। একদিকে বিদ্যালয়গুলোতে চরম শিক্ষক সংকট অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের কারনে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে নিতে প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগই পারে কার্যকরি ভুমিকা রাখতে। নিম্নে প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের যৌক্তিকতা উপস্থাপন করা হলোঃ

১। ১৬জুন ২০১৬, দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব প্রতিবেদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ডি পি ই এর তথ্য মতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০জন শিক্ষক অবসরে যান। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকের পরিমান যেহেতু বেশি কাজেই অবসরে যাওয়ার পরিমানও আগের চেয়ে বেশি। এর বিপরীতে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। দ্রুত শুন্য পদ পূরণ করা না হলে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সংকটের মধ্যে পড়বে। দ্রুত শিক্ষক সংকট সমাধানে প্যানেলে নিয়োগ দান অত্যাবশ্যক।

২। সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের জন্য প্রায় ৫বছর পড় একটি মাত্র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় তাও আবার ফলাফল প্রকাশে ২ বছর কেটে গেল। রিট জটিলতা ও সেশন জটের যাঁতাকলে পরে আমাদের অধিকাংশের ই বয়স শেষ। আবার কারো কারো বয়স থাকা সত্ত্বেও করোনা নামক মহামারির কারনে তা শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আল্লাহ প্রদত্ত এই মহামারি কবে নাগাদ শেষ হবে তা আমরা কেউ ই জানি না। তাই এই সব দিক বিবেচনা করে প্যানেলে নিয়োগ অবশ্যই যৌক্তিক ও সময় উপযোগী দাবী।

৩। শিক্ষা শিশুের একটি মৌলিক চাহিদা, এই চাহিদা খর্ব করার অধিকার আমাদের কারোরই নেই। শিশুের মৌলিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করার জন্য প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ জরুরী হয়ে পড়েছে।

৪।আমরা দেশের ইতিহাসের রেকর্ড সংখ্যক (২৪লক্ষ)প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে মাত্র ৫৫হাজার উত্তীর্ণ হই, যা মোট পরীক্ষার্থীর ২.৩%। ফলে পাশ কৃতদের মেধা নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়।

৫। সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৮নং শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যমান শুন্যপদসমুহে নিয়োগের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করে নিয়োগ দানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু শুন্য পদই নয় তীব্র শিক্ষক সংকট থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞক্তিতে উল্লিখিত শর্ত যথাযথভাবে পূরণ করে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

৬। দৈনিক শিক্ষার এক ফেসবুক লাইভে সাবেক শিক্ষা সচিব ও মাননীয় ডিজি মহোদয় নজরুল ইসলাম খান (NI KHAN) স্যার বলেছিলেন ” প্রয়োজন কখনও আইন মানে না, প্রয়োজন আইনের ঊর্ধ্বে “। তিঁনি আরও বলেন প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে কোনো আইনি জটিলতা নেই।

৭। দৈনিক কালের কণ্ঠের ২ অক্টোবর ২০১৯ এ এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা কোনো প্রার্থী অনুত্তীর্ণ নয়। তাই প্যানেল প্রত্যাশীদের অনুত্তীর্ণ বলা অযৌক্তিক।

৮। সংবিধানের ২৯ং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সরকারি নিয়োগলাভের ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে কিন্তু নানা জটিলতায় ও সঠিক সময়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত না হওয়ায় বিগত ৬বছরে চাকরির বাজারে থাকা প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে। এতে আমরা রাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষতি গ্রস্থ নয় কি?

৯। উচ্চ আদালত হতে রিট জটিলতার কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোতে নিয়োগ ৩-৪বছর বন্ধ ছিলো তারপর ব্যাংকগুলোতে প্যানেল পদ্ধতির প্রর্বতণ হলো। কিন্তু প্রাথমিকে রিট জটিলতার কারনে নিয়োগ প্রক্রিয়া ৪-৫বছর বন্ধ থাকা ও দেশের সবচেয়ে বড় নিয়োগ শাখা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রচুর শিক্ষক সংকট থাকার পরও কেনো প্যানেল পদ্ধতির প্রবর্তন নয়?

১০। প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হলে শিক্ষিত মেধাবীরা বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাবে, প্রাথমিক শিক্ষক সংকট দূর হবে, সরকারের সময় ও অর্থ উভয়ই বাঁচবে।

১১। প্যানেল পদ্ধতি প্রবর্তন হলে উচ্চ আদালত হতে রিট জটিলতা থাকবে না এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বর্তমানে মামলা জনিত যে সমস্যার সম্মুক্ষীণ হচ্ছে তা দূর হবে।

সর্বপরি দেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে অপেক্ষমান তালিকা হতে ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষা কার্যক্রমের সকল ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেল ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা বাংলাদেশ সরকারের ফলপ্রসূ, সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হবে বলে আমরা মনে করি।

৩৭হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ এর প্যানেল প্রত্যাশী।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *