বিশ্ব করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়েছে। থেমে যাওয়ার উপক্রম বিশ্বের অর্থনৈতিক চাকার গতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ এক যুদ্ধ।
যুদ্ধ যতটা প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে, তারচেয়ে আরো বেশি ক্ষুধার বিরুদ্ধে। লকডাউনে ঘরে বসে সময় কাটানোয় বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের সিংহভাগই সম্মুখীন হচ্ছেন আর্থিক সংকটের। এসময় সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে অসহায়, দুস্থদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বের অনেক নামি-দামী ব্যক্তিত্ব।
বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী আটজন ব্যক্তির হাতে যতো সম্পদ আছে সেই সম্পদের পরিমাণ দুনিয়ার অর্ধেক মানুষের সম্পদের সমান। কথাটি বলছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম। সংস্থাটি বলছে, এই আটজনের সম্পদের পরিমাণ বিশ্বের ৩৬০ কোটি দরিদ্র মানুষের সম্পদের সমান।
বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় ধারাবাহিকতায় বরাবরই আলোচনায় থাকেন বিল গেটস। এই ধনকুবের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারি প্রতিরোধে ১০ কোটি ডলার দান করেছেন।
বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় সাড়ে আটশ কোটি টাকা। মূলত এই টাকা বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস দম্পত্তি তাদের ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় দান করেন।
চীনের উহান থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরার পর করোনাভাইরাস শনাক্ত করা, ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা ও তৈরি করা এবং চিকিৎসার জন্য এই অর্থ দান করেছেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রায় ২ কোটি ডলার দান করেছেন। তিনি বাংলাদেশকেও সাহায্য দিয়েছেন। টুইটারে জ্যাক মা লিখেছেন, তারা ১৮ লাখ মাস্ক, দুই লাখ ১০ হাজার টেস্ট কিট, ৩৬ হাজার নিরাপত্তামূলক পোশাক দেবে। সেই সঙ্গে ভেন্টিলেটর এবং থার্মোমিটারও দেয়া হবে। যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বুঝে পেয়েছে।
বিশ্বের ধনীদের তালিকায় অন্যতম হলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। বিশ্বের সংকটময় এই পরিস্থিতিতে তিনিও মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তিনি ইতোমধ্যেই ৭ লাখ ২০ হাজার মাস্ক দান করেছেন। প্রয়োজনে আরো সাহায্য করবেন বলেও জানা গেছে।
এমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বোজেস বিশ্বের বর্তমানে শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। এমাজনের কর্মকর্তা এবং তিনি নিজে- সব মিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। আবার ব্যক্তি উদ্যোগে শুধু আমেরিকায় খাবার ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য দিয়েছেন ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
করোনাভাইরাস রুখতে বিপুল আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী পরিবার। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে ৫০০ কোটি রুপি দিয়েছেন মুকেশ আম্বানীর সংস্থা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট সরকারকেও ৫ কোটি রুপি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তার সংস্থার তরফ থেকে।
খেলাধুলার মধ্যে ধনী ফুটবলাররাও এগিয়ে এসেছেন এই পরিস্থিতিতে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং তার ফুটবল এজেন্ট জর্জ মেন্দেস পর্তুগালের হাসপাতালে থাকা করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা খাতে ১০ লাখ ডলারেরও বেশি দান করেছেন। নানা দুর্যোগে এভাবে সবসময় মানুষের পাশে থাকতে চায় সি আর সেভেন।
ফুটবল দুনিয়া কাপানো লিওনেল মেসি বার্সেলোনার একটি হাসপাতালে ১০ লাখ ইউরো দান করেছেন। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এক মিলিয়ন ডলার দান করেছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা নেইমার।