করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠছে বাংলাদেশের জন্য। ‘দুর্বার’ এই ভাইরাসের ছোবলে দেশে সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী ৩৩ জন আক্রান্ত আর ৩ জন মারা গেছেন। করোনা ঠেকাতে দেশে নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। বসে নেই সিলেটের প্রশাসনও। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সিলেটের বিভাগীয় প্রশাসন নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। প্রশাসনের ভাষায়, তাঁরা ‘করোনার আগেই’ থাকতে চান।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস ঠেকাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কমিটি গত ১৮ মার্চ গঠন করে দেওয়া হয়। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. মশিউর রহমানও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১২ সদস্যের বিভাগীয় কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে বিভাগীয় কমিশনার সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালককে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
বিভাগীয় এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), স্থানীয় সরকার পরিচালক, বিভাগীয় শহরের জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় উপপরিচালক, তথ্য ও গণযোগাযোগ অধিদফতরের উপপরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক, প্রাণিসম্পদের বিভাগীয় উপপরিচালক এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিচালক।
জানা গেছে, বিভাগীয় এই কমিটি নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে আশু করণীয় ঠিক করছে। গত রোববার এই কমিটি বৈঠকে বসে। সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল সোমবার ফের বৈঠকে বসে কমিটি। গতকালের এই বৈঠকে শুধু কমিটির সদস্যরাই নন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, বিজিবির প্রতিনিধি র্যাব প্রতিনিধি সিলেটের সকল বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিগণও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিলেটজুড়ে করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সবার মতামত গ্রহণ করা হয়। নেওয়া হয় কিছু জরুরি সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে করোনা ঠেকাতে ‘করোনার আগে থাকার’ বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছান।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস ঠেকাতে যা যা করণীয় সব করা হচ্ছে। সম্মিলিত বৈঠক হয়েছে। আমরা করোনার আগে থাকতে চাই। এ লক্ষ্যে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রাথমিক অবস্থায় সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনাক্রান্ত বা করোনায় আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের রাখা হবে। যদি ভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটে, তবে শাহী ঈদগাহ এলাকাস্থ সংক্রামক ব্যধি হাসপাতাল এবং খাদিমপাড়াস্থ শাহপরান (রহ.) হাসপাতালে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজনদের রাখা হবে। পরিস্থিতি যদি আরো খারাপ হয়, তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাতটি হেলথ সেন্টার এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে কাজে লাগানো হবে।
করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসকদের পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্টও (পিপিই) দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের পিপিই দেওয়া হয়েছে। যদিও সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি, তবে আপাতত যথেষ্ট। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো তারা নিজেরাই ব্যবস্থা করেছে, কেউ বানাচ্ছে, কেউ আমদানি করছে। পিপিই-এর বিষয়টি মোটামুটি সুরাহা হয়েছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ঠেকাতে বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি এখন থেকে আরো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো বিদেশফেরত ব্যক্তি যাতে বাইরে ঘুরাফেরা না করেন, তিনি যেন বাধ্যতামুলকভাবে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন, সে বিষয়ে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী-নেওয়া হচ্ছে সবার সহযোগিতা। বিমানবন্দরে আসার পরই প্রবাসফেরতদের হাতে কোয়ারেন্টিনের সিল মেরে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আজ মঙ্গলবার থেকে এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নজরদারি করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বিভাগীয় কমিটির ওই বৈঠকে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, করোনার উপসর্গ আছে, এমন ব্যক্তিকে তারা চিকিৎসা না দিয়ে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে পাঠাবেন। অন্য যেকোনো রোগীর ক্ষেত্রে তারা চিকিৎসা প্রদান করবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষ যাতে চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে হয়রানিতে না পড়ে, সে বিষয়ে কমিটির পক্ষ থেকে সব ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, করোনা ঠেকাতে সিলেট নগরীতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ও সিলেটে আসা সব ট্রেনেও জীবাণুনাশক প্রয়োগ করছে কর্তৃপক্ষ। করোনা মোকাবেলায় সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
এছাড়াও সিলেটে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার জন্য ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ এমন তথ্য জানিয়েছেন।